কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, বিশ্বের সর্বত্র সংবিধানের আলোকে সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালত পরিচালনা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছে না। তাই এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন।
আজ রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এস কে সিনহা এসব কথা বলেন।
‘ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল তো অনেক উপরে, এমনকি পাকিস্তানের মতো দেশও উচ্চ আদালতের (সুপ্রিম কোর্ট) নিয়ন্ত্রণে নিম্ন আদালত। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা বহাল আছে। কিন্তু আমরা সেটি এখনো করতে পারিনি। এ জন্য প্রধান বিচারপতি কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে’, বলেন প্রধান বিচারপতি।
২৬ এপ্রিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির মনে কোনো ক্ষোভ থাকলে সরকারের সঙ্গে আলোচনার করতে পারেন। কিন্তু প্রকাশ্যে এত কথা না বলা উচিত তাঁর।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশীসহ বিশ্বের কোনো দেশের প্রধান বিচারপতি পাবলিকলি (জনসমক্ষে) এত কথা বলেন না। প্রধান বিচারপতিরা বিচার বা আইনসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ছাড়া অন্য বিষয় নিয়েও কথা বলেন না।’
‘যদি প্রধান বিচারপতির মনে কোনো ক্ষোভ থাকে,বিচার বিভাগ নিয়ে কোনো কথা থাকে, তাহলে তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।’
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বেতন ৫৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। হাইকোর্টের একজন বিচারপতির বেতন ৪৯ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে এই সরকারের আমলেই। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও তারা পাচ্ছেন।’
আইনমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্যেরে পর আজ রোববার প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা আশ্চর্য হবেন যে পাকিস্তানের সংবিধানকে এক সময় বলা হতো আইয়ুব খানের সংবিধান। সে দেশে এখন যে আইনের শাসন চলছে, নিম্ন আদালতে এটা আজকেও আমরা পাইনি।’
‘আমরা যখন কিছু রায় দেই, তা যদি কারো বিরুদ্ধে যায়, তখনই তারা এমন সব মন্তব্য করেন যা আমাদের কষ্ট লাগে। কোনো মতেই আমরা নিজেদের সভ্য হিসেবে দাবি করতে পারব না।’
‘আইনের ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার কারো নেই’
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার সংবিধান সুপ্রিম কোর্টকে দিয়েছে, আর কাউকে দেওয়া হয়নি। আর এই সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য সময়ে সময়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এটাকেই মানতে হবে।
‘সাধারণ জনগণ ও সরকার সবাইকে আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিকভাবে আইনের যে ব্যাখ্যা দেন তা মেনে নিতে হবে।
একটা দেশের উন্নত রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মাপকাঠি শুধু টাকা দিয়ে হলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ অনেক আগেই উন্নত রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেত। উন্নত রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আইনের শাসন পালন করতে হবে। প্রত্যেককে আইনের শাসন মেনে চলতে হবে’, বলেন এস কে সিনহা।
জবির ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ক্রিস্টার্ন রিচার্ডসনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমন, কোষাধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, আইন অনুষদের ডিন ড. সরকার আলী আক্কাস প্রমুখ।