বাসার সামনে পুলিশের চৌকি, তবু পলাতক সাফাত
রাজধানীর বনানী থানা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার এক নম্বর আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ (২৬)। তাঁদের বাসা গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৬২ নম্বর সড়কে। সেই বাসার সামনেই পুলিশের চেকপোস্ট তথা তল্লাশি চৌকি। গত ৬ মে মামলা হওয়ার পর চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাফাতের গতিবিধি নজরে রাখতে বলা হয়েছিল। এরপর ৮ মে পর্যন্ত বাসায় থাকলেও সাফাতকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনানী থানায় মামলা হওয়ার পর সাফাতের বাবা বাবা দিলদার আহমেদ দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর ছেলে বাসাতেই আছে। ৮ মে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সাফাত তো আছেই। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে যেটা হওয়ার, সেটা তো হবেই।
পুলিশের অভিযানের পূর্বাপর
দিলদার আহমেদের ওই বক্তব্যের পর ৯ মে মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাফাতদের বাসা ‘আপন ঘর’-এ অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযান শেষে দুপুর পৌনে ১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন দত্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, সাফাতকে ধরতেই তাঁরা এই বাসায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি।
একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়ির ফটকে অবস্থানরত দিলদার আহমেদের গানম্যান ইউসুফ গাজী এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, সাফাত গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসাতেই ছিলেন। তবে এখন কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না।
সাফাতের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মেহেদী হাসান জানান, সোমবার একটি গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান সাফাত। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি।
সাফাতের বাড়ির ফটকের পশ্চিম পাশে খুব কাছেই দেখা যায় গুলশান থানা পুলিশের চেকপোস্ট। আর সেই চেকপোস্টে সব সময় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। গুলশান-২ নম্বর এলাকার ৬২ নম্বর ওই সড়কে যেসব গাড়ি ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে, তাদের চেকপোস্টে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এ ছাড়া চলাফেরায় সন্দেহ হলে যে কাউকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পুলিশের ভাষ্য
ধর্ষণের মামলার পর বাসার সামনে চেকপোস্ট থাকা সত্ত্বেও আসামি ধরা না পড়ার বিষয়টি গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকের কাছে জানতে চান এই প্রতিবেদক। জবাবে তিনি বলেন, সারা বছরই এই চেকপোস্টে পুলিশ থাকে। এই চেকপোস্টে দায়িত্বরতরা আসেন পুলিশ লাইনস থেকে। কে, কোন মামলার আসামি, তা তাঁরা জানবেন না।
এরপর এই প্রতিবেদক ওসিকে প্রশ্ন করে বলেন, ‘যেহেতু সাফাত আহমেদ একটি আলোচিত মামলার আসামি এবং তাঁর বাসা চেকপোস্টের সামনেই, সে কারণে আপনাদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছিল কি না ওই বাড়িতে নজর রাখতে?’
জবাবে ওসি বলেন, মামলা হওয়ার পর বলে দেওয়া হয়েছিল।
গত ৬ মে ধর্ষণের অভিযোগে বনানী থানায় একটি মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ওই মামলায় সাফাত ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ (৩০) (যদিও তাঁর প্রকৃত নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম বলে জানা গেছে), সাদমান সাকিব (২৪), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও তাঁর এক দেহরক্ষী। আসামিদের মধ্যে সাদমান সাকিব পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিক।
মামলার পর ৭ মে দুই ছাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় তাঁদের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন কবির সোহেল, মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন ও কবিতা সাহা।
এজাহারে যা আছে
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী, তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তাঁর বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি সাদমান সাকিবকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়, ঘটনার দিন সাফাতের জন্মদিনে দুই ছাত্রী যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী (অজ্ঞাতপরিচয়) তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তাঁর বান্ধবী জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তাঁরা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিলেন।