প্রসিকিউটরদের নির্মূল কমিটির সভায় যাওয়া অসদাচরণ
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের কিছু প্রসিকিউটর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভায় গিয়ে মিসকন্ডাক্ট বা অসদাচরণ করেছেন।
আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনের সময় প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে সাঈদীর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় দেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরদের সমালোচনা করেন এবং একটি পর্যবেক্ষণ দেন। ওই পর্যবেক্ষণ বাতিলের জন্য আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন আবেদন জানালে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কিছু নন-প্র্যাকটিসিং ল'ইয়ার প্রসিকিউটর হয়েছেন। কিছু প্রসিকিউটর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মিটিংয়েও যান। যাদের (নির্মূল কমিটি) পলিটিক্যাল এজেন্ডা রয়েছে। তাঁরা (প্রসিকিউটর) কিন্তু মিসকন্ডাক্ট (অসদাচরণ) করছেন। এঁরা পাবলিক প্রসিকিউটরের পজিশন বোঝেন না।’
শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
আজ সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য উপস্থাপন দিয়ে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শুনানি শেষে রায় দেন আপিল বিভাগ। এর আগে গতকাল রোববারও একই বেঞ্চে শুনানি হয়। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেইন হায়দার।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ আবেদন করে। অন্যদিকে খালাস চেয়ে সাঈদীর আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন করেন। গতকাল রোববার থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত দুই পক্ষের বক্তব্য শোনেন আদালত। পরে সোমবার পর্যন্ত তা মুলতবি করা হয়।
আজ শুনানিতে প্রথম রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে সাঈদীর পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এস এম শাহজাহান ও তানভীর আল আমিন।
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। মোট ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনে পাঁচটি যুক্তি দেখানো হয়।
একই বছরের ১৭ জানুয়ারি আপিলের রায় থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন সাঈদী। মোট ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস পেতে ১৬টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।
২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত সাঈদীর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন। নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারে রাষ্ট্র বা আসামিপক্ষ।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই ৭০ জন নিহত হন।
আপিলে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ১০ নম্বর অভিযোগ বিশা বালিকে হত্যা, ১৬ নম্বর অভিযোগ তিন নারীকে অপহরণের পর ধর্ষণ এবং ১৯ নম্বর অভিযোগ প্রভাব খাটিয়ে এক থেকে দেড়শ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করার।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬ নম্বর অভিযোগ লুণ্ঠনের, ১১ নম্বর অভিযোগ হামলা ও লুণ্ঠনের এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণের।
৮ নম্বর অভিযোগটি ছিলো হত্যা ও অগ্নিসংযোগের। এর অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হয়। একই অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে তাঁকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
এ ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৭ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এখানে তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়।