ইভিএম প্রশ্নে বিএনপির প্রস্তাব আসছে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে নীরব ও সরব প্রস্তুতি। এর পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনা ও ভোট গ্রহণ পদ্ধতি নিয়েও চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ মত দিয়েছে, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন শেখ হাসিনা। আর ভোট গ্রহণ পদ্ধতি হিসেবে ইলেকট্রনিকস ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পক্ষে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, বিএনপি ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব না দিলেও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবকে এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে শিগগির প্রস্তাব দেবেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকালীন সরকার ও ইভিএম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি, এ কথা সত্যি। তবে আমরা এখনো কোনো প্রস্তাব দিইনি। শিগগির এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেবো; যেমনভাবে ঘোষণা করে করেছি ভিশন-২০৩০।’
কবে নাগাদ সে প্রস্তাব আসতে পারে এবং সে প্রস্তাবে কী থাকতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আগে প্রস্তাব দিই, প্রস্তাব দিলেই জানতে পারবেন। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব দেবো।’
আর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ইভিএমে ‘আওয়ামী লীগের ইচ্ছার প্রতিফলন’ দেখছেন। তিনি বলেন, ‘ভোট কারসাজি করতেই আওয়ামী লীগ ইভিএম পদ্ধতি চায়। নির্বাচন কমিশন যদি তাই করে, তবে এটা হবে আওয়ামী লীগের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো।’
তবে আওয়ামী লীগ এতে ‘নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, বরং ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকাশের ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখতে চায়। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিএনপি নব্বইয়ের পরে ফ্রি সাবমেরিন কেবল নিতে চায়নি। পরে এর অনিবার্যতা বুঝে কিনে নিতে হয়েছিল। আসলে বিএনপি নেতারা প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে চলতে পারেন না, পিছিয়ে থাকতে ভালোবাসেন। ইভিএমের প্রতি অনীহা আবারও তাই প্রমাণ করল।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা সংবিধানে বিশ্বাস করি। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আর বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের সরকার এগিয়ে চলছে। ভোট পদ্ধতিও আমরা অন্যান্য দেশের মতো করার জন্য মত দিয়েছি। সে জন্যই আমরা মনে করেছি, এ মুহূর্তে ইভিএমের বিকল্প নেই। এ মাধ্যমেই দ্রুত সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব। এটা অস্বীকার মানে প্রযুক্তিকে স্বাগত না জানানো।’
ইভিএম নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করেন, প্রযুক্তির সঙ্গে থেকেই সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাধানের পথ বের করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে সারা বিশ্বে নির্বাচন হচ্ছে। এটা নিয়ে বিতর্ক না করে উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাধানের পথ অনুসন্ধান করাই মঙ্গলজনক হবে। বিএনপি প্রস্তাব দেবে, সেটা তো ভালো কথা। তবে তা অবশ্যই যেন সমাধানের পথ দেখায়।’
উভয়ে যদি ঐকমত্যে না আসে, তাহলে এর সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে দেওয়া দলীয় প্রস্তাব এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত যেন কোনো দলের দলীয় চিন্তাকে বাদ দিয়ে না হয়। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ পরিবেশ তৈরি হবে, এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’
এদিকে ইভিএমের পক্ষে বলেছেন প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারও। তিনি মনে করেন, ‘বিএনপি একটি প্রযুক্তিবিরোধী দল। ওরা প্রযুক্তি বোঝে না, ভয় পায়। ইভিএম পদ্ধতিতে সারা পৃথিবীতে ভোট হচ্ছে, এখানে হলে কী সমস্যা। তাঁরা মেশিন দেখুক, কোনোভাবে জটিলতা তৈরি করার কোনো অপশন আছে কি-না তা খুঁজে বের করুক। তা না করেই বিতর্ক। আসলে সস্তা বিতর্ক এখন আর জনপ্রিয়তা পায় না।’