ইসলামিক ফোরাম গঠনের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ
একটি পৃথক ইসলামিক ফোরাম গঠন করার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বর্ধিত অংশে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কার্যালয়ে এ বিষয়ে সম্পাদক ণ্ডলীর জরুরি সভায় প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এতে দলীয় নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেকারণে আলোচনা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেনি। উপস্থিত নেতারা এ বিষয়ে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকার অভিপ্রায়ে সভা শেষ হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইনজীবীদের একটি পৃথক ফোরাম করতে আমরা সমর্থ হয়েছি। আমার মনে হয় ইসলামী একটি ফোরামও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সামনে রমজান মাস তখন ইসলামিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওই ফোরাম গঠন করে করা যাবে।’
কাদের বলেন, ‘আমরা গতানুগতিক ফোরাম দাঁড় করাব না। আমাদের আদর্শ ধারণ করেন এমন আলেম ওলামা নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম করা যেতে পারে।’
দলটির সাধারণ সম্পাদককের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ও অর্থ-পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টিপু মন্সি। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল সেখানে পৃথক ফোরাম কতখানি যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। তা ছাড়া দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক একটি পদ রয়েছে। এ পদের দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি ইসলামিক কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করতে পারেন।
এ সময় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ধর্মীয় নানা কার্যক্রমে আমরা জড়িত। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে যাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওলামা লীগ নামে আমাদের একটি ইসলামিক সংগঠন ছিল। এই ফোরাম কেন হয়েছিল, আর কেনই বা নেই?’
আওয়ামী ওলামা লীগ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ বলেন, ওই সংগঠন দলাদলি এবং বির্তকিত সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবশ্য ওই সংগঠন পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
ইসলামিক ফোরাম নিয়ে আলোচনা করা হলেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়ে এ বিষয়টির আলোচনা শেষ হয় বৈঠকে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান বলেন, তৃণমূলের বিরোধ মীমাংসায় যেসব নেতাকে ঢাকায় ডেকে এনে বিরোধ মীমাংসা করা হচ্ছে তাতে হিতে বিপরীতই হচ্ছে। তৃণমূলের রাজনীতিতে কমবেশী বিরোধ থাকবেই। সেটা আমরা সংশ্লিষ্ট জেলায় গিয়ে প্রতিনিধি ও বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আরো বেশি ফলপ্রসূ হবে।
আবদুর রহমান বলেন, এতে স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং আরো বাড়ছে। স্থানীয় সমস্যা স্থানীয়দের বেশি বেশি অন্তর্ভুক্ত করে সমাধানের চেষ্টা করা হলে তাতেই বেশি সুফল পাওয়া যাবে। তৃণমূলের সমস্যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থানীয় ভাবে কীভাবে সুরাহা করা যায় তা ভেবে দেখা দরকার।
এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এমন হয়ে থাকলে বিকল্প চিন্তা অবশ্যই আমাদের করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনভিত্তিক স্থানীয় রাজনীতিতে না জড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আগে আগেই নির্বাচন করার মানসিকতা নিয়ে এলাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের খবরদারি অস্থিরতা তৈরি করবে। এই মানসিকতা সবাইকে পরিহার করতে হবে।
অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আগে কেন্দ্রের অনুমতি নেওয়া লাগবে বলে উত্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
এ বিষয়ে বৈঠক শেষে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, 'এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ মিটিং ছিল। সুতরাং এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যতটুকু বলা যায় তা সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ব্রিফ করেছেন।'
যদিও এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি ওবায়দুল কাদের। তিনি শুধু দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।