চলতি মাসে আ.লীগে আসছে ১০ হাজার নতুন নেতা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মের মধ্যে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিতে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের গত সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ৩১ মের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মোট ১৬০টি কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ ঘোষণা করতে হবে, যাতে প্রতি কমিটিতে গড়ে ৬৩ জন ধরে স্থান পাবেন ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী।
নতুন নেতৃত্ব নগর আওয়ামী লীগকে নতুন উদ্যম জোগাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দুই ভাগে বিভক্ত নগর কমিটিতে মোট ৫০টি থানা, ৯৩টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরে ২৬টি থানা, ৩৬টি ওয়ার্ড ও নয়টি ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে রয়েছে ২৪টি ওয়ার্ড, ৫৭টি থানা ও আটটি ইউনিয়ন।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে প্রতিটি থানা আওয়ামী লীগ কমিটিতে ৩৪ জন কর্মকর্তা ও ৩৩ জন সদস্যসহ মোট ৬৭ জন সদস্য থাকবেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে (মহানগর) ৩০ জন কর্মকর্তা ও ৩৫ জন সদস্যসহ মোট ৬৫ জন সদস্য থাকবেন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে ৩০ জন কর্মকর্তা ও ৩৫ জন সদস্যসহ মোট ৬৫ জন সদস্য থাকবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হবে। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে আমরা কয়েক মাস ধরে কাজ করছি। আশা করি আমাদের নেতা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ মের মধ্যেই সব থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারব। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরে ৯টি ইউনিটে ভাগ করে ভোটার আইডি কার্ডসহ জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আহ্বান করেছি। সে অনুযায়ী দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।’
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে এনটিভি অনলাইনকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। তিনি জানান, ৯টি ইউনিটে তাঁরা কাজ করছেন। জীবনবৃত্তান্ত, ভোটার আইডি কার্ড ও চারিত্রিক সনদ আহ্বান করা হয়েছে। পদপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত সোমবার রাতে উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ নেতারা দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কাজের অগ্রগতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা নাম না প্রকাশ করা শর্তে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছে, এসব কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় বাকি পদগুলো নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। বেশির ভাগ কমিটির খসড়া তালিকা হয়ে গেছে। কিছু পদে একাধিক প্রার্থীকে নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সমস্যার জায়গাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার সিদ্ধান্ত হয়।
অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে বিভক্ত করে গত বছর এপ্রিলে উত্তরে সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহকে আর দক্ষিণে হাজি আবুল হাসনাতকে সভাপতি নির্বাচিত কর হয়। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। অবিভক্ত মহানগর কমিটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নতুন কমিটিতে কোনো দায়িত্বে রাখা হয়নি। একই দিনে নগরের মূল কমিটির পাশাপাশি ৪৯টি থানা ও ১০৩টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনের তিন বছর তিন মাস পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকার ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের অন্তর্গত ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ডে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। হয়নি ইউনিয়নগুলোরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অবশ্য এর আগে ২ জানুয়ারি রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অবিলম্বে মহানগরের সব থানা, ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ কমিটিতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত করতেও বলা হয়েছিল।