সরানো হলো সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য
অবশেষে অপসারণ করা হলো সুপ্রিম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শুরু হয়ে অপসারণ কাজ শেষ হয় ভোরে। এ সময় ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ক্ষুব্ধ জনতা।
আজ শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন।
এদিকে, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এর স্থপতি মৃণাল হক।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ স্থাপন করা হয়েছে—এমন দাবি করে এর অপসারণের দাবি করে আসছিল হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক নানা সংগঠন। এ বছরের রমজানের আগে ভাস্কর্য অপসারণের সময়সীমাও দিয়েছিল ওই সব সংগঠন।
হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ভাষায় গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে তাঁদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমন পরিপ্রেক্ষিতেই অপসারণ করা হয়েছে শিল্পী মৃণাল হকের গড়া ভাস্কর্যটি। অপসারণের খবর পেয়ে মধ্যরাতেই সুপ্রিম কোর্টের গেটের সামনে জড়ো হন প্রতিবাদকারীরা। এ সময় আদালতের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন তাঁরা।
ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতাকারীরা প্রধান ফটক ও সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা শুক্রবার (আজ) বেলা ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ জনগণের ব্যানার নিয়ে সমবেত হব। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে অবস্থান করব।’
আরেক প্রতিবাদকারী বলেন, ‘এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের প্রতিটি ভাস্কর্য তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’
‘এই ভাস্কর্য ভাঙতে হবে, এমন কী হয়েছে? আমি এটা ভাঙার কিছু দেখছি না’, যোগ করেন আরেক প্রতিবাদকারী।
ভাস্কর্য অপসারণের শুরু থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন এর স্থপতি মৃণাল হক।
‘আমাকে চাপ দিয়ে সরানো হচ্ছে। সরাতে বাধ্য হচ্ছি। আরেকজন সরাতে গেলে দেখা যাবে ভাস্কর্য ভেঙেচুরে নষ্ট হয়ে যাবে। এটা অ্যানেক্স ভবনের সামনে বসানো হতে পারে’, যোগ করেন ভাস্কর।
এ ছাড়া ভাস্কর্যটিকে গ্রিক দেবীর মূর্তি বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে দাবি করে এই ভাস্কর বললেন, এটা আসলে গ্রিক কোনো দেবীর মূর্তি নয়।