কাতার কেন সৌদি আরবের চক্ষুশূল?
এবারই প্রথম নয়। ২০১৪ সালেও ছিন্ন হওয়া খড়গ নেমেছিল কাতারের ওপর। সৌদি আরব, বাহরাইন আর সংযুক্ত আরব আমিরাত ওই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ‘সাময়িক’ ছিন্ন করেছিল।
তিন বছরের মাথায় আবারও সৌদি আরবের নেতৃত্বে সাত দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। তালিকায় আছে মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইয়েমেন, লিবিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপও।
সাতটি দেশই মুসলিম প্রধান। প্রতিটি দেশের সঙ্গেই বিভিন্ন জোটে ছিল কাতারের। তারপরও এই সাতটি দেশের অভিযোগ, কাতার সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ বিষয়টিকে নানাভাবে ভেঙে দেখার চেষ্টা করেছে। কাতারের সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্কের বিষয়টিই আসলে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের তিতকুটে সম্পর্কের কথা সারাবিশ্বই জানে। সৌদির নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলেও কাতার সে পথে হাঁটেনি। বরং ঐতিহাসিকভাবেই ইরানের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কটা বেশ ভালো।
কিন্তু হঠাৎ কী হলো যে সৌদি আরব তড়িঘড়ি করে সম্পর্ক ছিন্ন করতে গেল?
মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যোগাযোগ
কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক দিয়ে কাতার কখনোই সৌদি আরবের দেখানো পথে হাঁটেনি। বরং প্রত্যাখ্যান করে নিজের শক্ত অবস্থানই নিয়েছে। ২০১১ সালে মিসরে হোসনি মোবারকের পতনের পর মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থান ঘটে। কাতার একে স্বাগত জানায়। বিষয়টি সৌদি আরবকে ভাবিয়ে তোলে। সৌদি আরব চায় মধ্যপ্রাচ্য ‘স্থিতিশীল’ থাকুক। এটা ওই এলাকার জন্য প্রয়োজন বলে মনে করে সৌদি। দেশটির অন্যান্য মিত্রদেশগুলোও মনে করে, যদি ওই এলাকায় বিপ্লবাত্বক কিছু হয় তাহলে তা ‘হুমকি’ হয়েই আসবে।
এই যখন অবস্থা, তখন কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। ২০১৩ সালে ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসির পতন হয়। ক্ষমতায় আসেন আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। সৌদি সরকার সিসি সরকারকে স্বাগত জানায়। কিন্তু কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা অবস্থান নেয় সিসি সরকারের বিরুদ্ধে।
সংবাদ কেলেঙ্কারি
ঘটনাটা ঘটেছে কয়েকদিন আগে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এলেন সৌদি আরব সফরে। সফর শেষ হওয়ার তিনদিন পরই কাতারের সংবাদ সংস্থা কাতার নিউজ এজেন্সি একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি হিজবুল্লাহকে বলেছেন, ‘ন্যয়সঙ্গত প্রতিরোধ আন্দোলন’ আর ইরানকে বলেছেন ওই এলাকার ‘বড় শক্তি’। পরে ওই সংবাদ সংস্থা সংবাদটি সরিয়ে নেয়। দাবি করে ওয়েবসাইটটি ‘হ্যাক’ হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ঘটনা কয়েকদিন পর ইরানি নেতা হাসান রুহানির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন কাতারের আমির শেখ তামিম। বিষয়টি একেবারেই পছন্দ হয়নি সৌদি আরবের।
বার্তা দিল সৌদি আরব?
কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে একটা বার্তা দিল সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যে মূলত নেতৃত্ব দেয় সৌদি আরব। আর দেশটির চোখে ইরান ‘গণশত্রু’। যদি ইরানের সঙ্গে হাত মেলায় কেউ, তা সে যে-ই হোক, ক্ষমা নেই।
ট্রাম্প সৌদি আরব এসে ইরানবিরোধী জোটকে শক্তিশালী হওয়ার বাতাস দিয়ে গেছেন। আর ওই বাতাসেই উড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে কাতারের।
কাতার দেশটি ছোট। কিন্তু এর অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট মজবুত। তরল গ্যাস রপ্তানির দিক দিয়ে দেশটি শীর্ষে। কাতারের সামরিক অবস্থাও যাচ্ছেতাই নয়।
কাতার থেকে সবচেয়ে বেশি গ্যাস কিনে জাপান। এরই মধ্যে জাপান জানিয়ে দিয়েছে সৌদি জোটের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের কোনো প্রভাব আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ফেলবে না।
কেবল তাই নয়, কাতারে শ্রম বাজারও বেশ বিস্তৃত। দেশটিতে কাজ করে অসংখ্য প্রবাসী। এর চেয়েও বড় কথা আগামী ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা কাতারে। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই দেখা দিল সংশয়।