ফাইনালে রানের পাহাড় পাকিস্তানের
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জয়ের লড়াই চলে এসেছে শেষপর্যায়ে। আজ ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল শেষেই জানা যাবে কার হাতে উঠছে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। শিরোপা জয়ের অন্তিম লড়াইয়ে ব্যাট হাতে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। গড়েছেন রানের পাহাড়। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিততে হলে ভারতকে পেরোতে হবে ৩৩৮ রানের পাহাড়।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অবশ্য বড়সড় ধাক্কা খেতে বসেছিল পাকিস্তান। জাসপ্রিত বুমরাহর করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ফখর জামান। এর পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, বুমরাহর করা বলটি লাইনের বেশ বাইরে ছিল। ফলে একটি জীবন পেয়ে যান ফখর। সেই সুযোগটা ভালোমতোই কাজে লাগিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সাঈদ আনোয়ার ও শোয়েব মালিকের পর পাকিস্তানের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করার বিরল কীর্তি গড়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। খেলেছেন ১০৬ বলে ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
উদ্বোধনী জুটিতেই ১২৮ রান যোগ করে পাকিস্তানকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন দুই ওপেনার ফখর জামান ও আজহার আলী। প্রথম উইকেটের দেখা পেতে ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৩তম ওভার পর্যন্ত। ৫৯ রান করে দুর্ভাগ্যবশত রানআউটের ফাঁদে পড়েছেন আজহার। ৩৪তম ওভারে পাকিস্তান পেয়েছে দ্বিতীয় সাফল্য। ১১৪ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হয়েছেন ফখর। ততক্ষণে পাকিস্তান ছুঁয়ে ফেলেছে দুইশ রানের মাইলফলক। ৪০তম ওভারে ১২ রান করে ফিরে গেছেন শোয়েব মালিক। শেষপর্যায়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজের ৩৭ বলে ৫৭ ও ইমাদ ওয়াসিমের ২৫ রানের ঝড়ো দুটি ইনিংসে ভর করে স্কোরবোর্ডে ৩৩৮ রান জমা করেছে পাকিস্তান।
আজ ফাইনালে টসভাগ্যটা গেছে বিরাট কোহলির পক্ষে। টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। সেমিফাইনালের দল নিয়েই ফাইনালেও খেলছে ভারত। যার অর্থ, অশ্বিন খেলছেন ভারতের হয়ে। ফাইনালে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলছে পাকিস্তান। মোহাম্মদ আমিরকে ফিরিয়েছে দলটি।
অল এশিয়ান ফাইনালের শিরোপা যেই জিতকু না কেন, লড়াইটা যে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের সঙ্গে পাকিস্তানের পেস অ্যাটাকের হবে, সেটা হয়তো না বললেও চলে। পরিসংখ্যানই বলছে এমন কথা। এবারের আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। এই তিন ব্যাটসম্যান মিলে সংগ্রহ করেছেন ৮৭৪ রান, যা পাকিস্তানের পুরো টুর্নামেন্টে মোট রানের চেয়েও বেশি। চার ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭৯.২৯ গড়ে ৩১৭ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন শিখর ধাওয়ান। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৩ রানে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ধাওয়ানের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন রোহিত শর্মা। চার ম্যাচে ১০১.৩৩ গড়ে রোহিত শর্মার রান ৩০৪। চার ম্যাচে কোহলির রান সংখ্যা ২৫৩। এখন পর্যন্ত কেবল এক ম্যাচে ভারত অধিনায়ককে আউট করতে পেরেছেন প্রতিপক্ষের বোলাররা।
বল হাতে বরাবরের মতো আলো ছড়িয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা। টুর্নামেন্টে মোট ৩১টি উইকেট শিকার করেছেন দেশটির বোলাররা, যার মধ্যে ১৭টি উইকেটই নিয়েছেন হাসান আলী ও জুনায়েদ খান। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বেধড়ক মার খাওয়ার পর বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা। শেষ তিন ম্যাচে পাকিস্তানের বোলিং গড় ২৩.৭৮! এই তিন ম্যাচে মাত্র ৪.৪৬ গড়ে ২৮ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা।
ফাইনালের আগে ‘ফাইনাল’ শব্দটাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন বিরাট কোহলি। জানালেন, আর দশটা ম্যাচের মতো ফাইনালেও জয়ের জন্য খেলবে তাঁর দল। ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কোহলি বলেন, ‘আর অন্য ম্যাচের মতো এটিও একটি ম্যাচ। বেশি ভাবার কিছু নেই। অন্যদিনের মতো আজও অনুশীলন করেছি আমরা। খুব বেশি চাপ নিচ্ছি না। ফলাফল নিয়ে কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না। এই ম্যাচের পরও অনেক ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের।’
ফাইনালের চাপ নিতে নারাজ পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও। তিনি বলেন, ‘ভালো খেলে ফাইনালে এসেছি আমরা। এটা ফাইনাল ম্যাচ হলেও অন্য নকআউট ম্যাচগুলোর মতোই। বেশি চাপ নিলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বে। তাই কোনোরকমের চাপ নিচ্ছি না।’