‘দেশে বুলে গরিব নাই, তাইলে আমরা কারা?’
‘খাওনের খবর পাইয়া আইছি। এক ভাইয়ে কইল, ভালা খাওন আছে, আইও। হেল্লাইজ্ঞা আইলাম। সময় দিছিল ১১ডা। আমি সকাল থাইক্কাই বইয়া আছি। বুজেন তো খাওনের খবর ফাইলে মাইনসের অভাব অয় না। শেষে আইলে পাওন যায় না। ঈদের দিন একটু ভালা খাওন খামু, বাচ্চাগো দিমু।'
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সোমবার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এনটিভি অনলাইনের কাছে এভাবেই বলছিলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এলাকার ফুটপাতে থাকা কাদের খান। তাঁর থাকার কোনো স্থায়ী জায়গা নেই। আজ স্টেডিয়াম তো কাল রেলওয়ে স্টেশন অথবা যেখানে সুযোগ হয়, সেখানে।
নামের সঙ্গে খান শব্দটা যুক্ত হলো কীভাবে, তা তিনি নিজেও জানেন না। জানেন না কে তাঁর বাবা, কোথায় তাঁর বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই এই নাম মানুষের মুখে শুনতে শুনতে তিনি বড় হয়েছেন।
‘আজ ঈদের দিন অনেকেই তো খাবার দিচ্ছে, এখানে কেন এলেন?’ জিজ্ঞাসা করার পর কাদের বলেন, 'অনেকে কী দিব, নাকি দিব না হেইডা তো জানি না গো বাপজান।
এইনে ভালা খাওন দিব হুইন্নে আইছি। সব জায়গা থাইক্কা ভালা খাওনের ঘেরান আইলে পেডে খিদা আরো বাড়ে গো বাপজান। খাওনের লোভে বাচ্চারা কান্দে। বাচ্চাগো কান্দন দেইক্কা বাপ ওইয়া কি সহ্য অয়?'
কাদেরের তিন সন্তান। বড় ছেলে জন্মের পরই হারিয়ে গেছে। এক মেয়ে ছিল, সেটা বড় হওয়ার পর এক পথচারীকে বিয়ে করে নিরুদ্দেশ। সবার ছোট ছেলেটা ভিক্ষা করে কাদেরের সঙ্গে।
প্রসঙ্গ ছাড়াই কাদেরের উক্তি, 'খাওন দিতাছে, তাই মন্দ কইবার পারি না। কিন্তু দেহেন, গুলিস্তানে থাইক্কা হাজারবার নেতাগোরে কইতে হুনছি, কয় দেশে বুলে গরিব নাই। সম্ভব ওইলে আজও কইব। কিন্তু আফনেই কন তাইলে আমরা কারা?'
কাদেরের এই বক্তব্যের পর লাইনে থাকা কয়েকজন দুস্থ মানুষের উক্তি, ‘আমরা কোটিপতি, শিল্পপতিও কইতে পারেন। পুরা ঢাকাটাই আমাগো আইজ। এইনো ঘুমাই তো কাইল হেইনে।’
লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পালা শেষ হলে কাদের এক প্যাকেট খাবার নিয়ে যান সন্তানের খোঁজে। যেতে যেতে পেছন ফিরে কাদেরের উক্তি, 'পারলে দুই কলম লেইক্ষেন বাজান।'