বিনোদন কেন্দ্রে কী খাচ্ছে শিশুরা?
ঈদের ছুটিতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় লেগেই আছে। শিশুরা খোলা জায়গায় মনের আনন্দে হৈচৈ করছে, বিভিন্ন রাইডে চড়ে যারপরনাই উচ্ছ্বাস করছে। সন্তানের এমন হাসিমাখা মুখ দেখে অভিভাবকরাও আনন্দ পাচ্ছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে অবদার মেটাতে সন্তানদের মুখে তাঁরা কী তুলে দিচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখছে? এ ব্যাপারে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই বা কী দায়িত্ব পালন করছে?
রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোর অন্যতম হাতিরঝিল, শ্যামলীর ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড (সাবেক শিশুমেলা), রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের আশপাশে ভ্যানের ওপর খোলা জায়গায় রেখে বিক্রি হচ্ছে নানা খাবার। এসব খাবারের মধ্যে বিভিন্ন রকম ফলের আচার, আনারস ও পেয়ারা ইত্যাদি রয়েছে। সড়কের পাশে থাকা খাবারের ভ্যানে প্রতিমুহূর্তে ধুলা এসে জমা হচ্ছে, বসছে মশা-মাছি। খাবারের ওপর নেই কোনো ধরনের আবরণও।
এসব জায়গায় অবশ্য নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে খাবারের দোকান চলছে। কিন্তু রাজধানীর শাহবাগের শিশুপার্কে সবার সামনেই বিক্রি হচ্ছে এসব খাবার। এই খাবার অস্বাস্থ্যকর হলেও মুখরোচক। শিশুরা পার্কে প্রবেশের আগে কিংবা বের হওয়ার পর খাবার কিনছে। এসব খাবার কিনে দিতে দ্বিধা করছে না অভিভাবকরাও। বরং শিশুদের সঙ্গে নিজেরাও মনের আনন্দে খাচ্ছে সেসব।
রাজধানীর কমলাপুর এলাকা থেকে মেয়ে তামিমাকে নিয়ে শাহবাগের শিশুপার্কে বেড়াতে এসেছেন তৈরি পোশাক শ্রমিক আফজাল মিয়া। অন্য সবার মতো তিনিও মেয়েকে খোলা ভ্যান থেকে আচার কিনে দিয়েছেন। আফজাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই খাবার সবাই খাইতাছে, তাই আমিও কিনছি। খাবারে ভেজাল আছে কি না এই চিন্তা কইরা আমাদের মতো গরিব মানুষ পারব কন?’
শিশু তামিমা অবশ্য আচার পেয়ে খুব খুশি। মনের আনন্দে খাচ্ছে সে। তার অভিব্যক্তি, ‘অনেক মজা তো, তাই খাইতাছি।’
মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী আলফাজ তালুকদার। এবার ব্যস্ততার কারণে তাঁর গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করা হয়নি। পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করেছেন। ঈদের দিন ব্যস্ততার কারণে বের হতে না পারলেও আজ সকালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেরিয়েছেন ঘুরতে।
আলফাজও মেয়ের আবদার মেটাতে খাবার কিনে দেন। জেনেশুনেও কেন বাচ্চাকে এ ধরনের খাবার কিনে দিচ্ছেন? জবাবে আলফাজ বলেন, ‘আসলে এগুলো দেখে বাচ্চারা এমনভাবে ধরে, যদি কিনে না দেই তাহলে পুরো রাস্তায় কান্না করে করে যাবে। এসব খাবার এমন জায়গায় রাখাই উচিত না।’
শিশুপার্ক চত্বরে ১০ বছর ধরে আচার বিক্রয় করছেন আনিস মিয়া। তাঁর ভাষ্য, ‘এই আচার খোলা না রাখলে রংটা দেখা যায় না। আর সেটা দেখা না গেলে বাচ্চারা কি কিনব? ময়লা পরে ঠিক আছে কিন্তু আমাগো বেচাকেনায় তো অসুবিধা হয় না।’
আনিস মিয়া দাবি করেন বাসায় তাঁর স্ত্রী এসব আচার তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘আমাগোর বাসায় বাচ্চার মায়ে বানায়। মেলা পেরেসানি আছে। রইদ লাগানো লাগে। বাসার ছাদের উপরে দিনের পর দিন লাইরা (শুকানো) রাখি।’
এ ধরনের খাবারে শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসাকরা।
মিডফোর্ড হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস কে বণিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিশুদের সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। সে কারণে সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব বোঝা যায় না। তবে এই খাবারে আমাদের নতুন প্রজন্ম তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা লিভার, কিডনি ও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। এটা অচিরেই প্রতিরোধ দরকার।’
এ বিষয়ে শিশুপার্কের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘যখন অভিযান চালানো হয় তখন এরা থাকে না। কিন্তু অভিযানের পর আবার বসে যায়। আরো নানা সংকট আছে, বাইরে থেকে এমন লোক এসব নিয়ন্ত্রণ করে যা আপনাদেরও জানা। ফলে আমরা অসহায়।’