নেত্রী যখন বলবেন তখনই মেয়াদ শেষ হবে
সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮তম সভাপতি। ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি আগের কমিটিতে পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সোহাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এরপর ২০০৯ সালে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০১০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে’ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি ভাষা কোর্সে অধ্যয়ন করছেন।
১৯৮৬ সালের ৩১ আগস্ট মাদারীপুর জেলার দক্ষিণ দুধখালী ইউনিয়নে জন্ম। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা আবদুর রহমান শিক্ষক, মা মর্জিনা বেগম একজন সমাজসেবী। ২০০২ সালে সাইফুর রহমান সোহাগ মাদারীপুর ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ২০০৪ সালে সরকারি নাজিমুদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন।
সাইফুর রহমান সোহাগ যে কমিটির সভাপতি, সেই কমিটির মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। কমিটির নানাবিধ বিষয় এবং ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের নিজস্ব প্রতিবেদক মুহম্মদ আকবর।
এনটিভি অনলাইন : চলতি মাসে অর্থাৎ জুলাই মাসে আপনাদের এই কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে…
সাইফুর রহমান সোহাগ : কমিটির মেয়াদ বলতে নেত্রী যেদিন বলবেন, সেদিনই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে।
এনটিভি অনলাইন : মানে অফিশিয়ালি শেষ হচ্ছে কি না?
সাইফুর রহমান সোহাগ : হ্যাঁ শেষ হচ্ছে। তবে নেত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সবকিছু করব।
এনটিভি অনলাইন : আপনি বলতে চাচ্ছেন ওনার নির্দেশ অনুযায়ী আপনারা পরবর্তী কমিটি দেবেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : হ্যাঁ।
এনটিভি অনলাইন : আপনারা গত দুই বছরে ছাত্রলীগে যে গুণগত পরিবর্তন এনেছেন সে বিষয়ে যদি বলেন।
সাইফুর রহমান সোহাগ : ছাত্রলীগ সুশৃঙ্খল সংগঠন। আমরা জানি, আপনারাও জানেন। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান। আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ছাত্রলীগকে আরো বেশি সুশৃঙ্খল করার চেষ্টা করেছি। এবং নতুন নতুন কিছু প্রোগ্রাম যেমন—বই পড়ার প্রবণতা, আরো বাড়ানোর চেষ্টা করেছি, নারীদের নিয়ে প্রোগ্রাম করেছি এবং মাদকের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
এনটিভি অনলাইন : মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, সেটার কী অবস্থা?
সাইফুর রহমান সোহাগ : মাদ্রাসার কমিটি সরাসরি আমরা করি না। জেলার কমিটি করে। মাদারীপুর জেলায় হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে কিছু হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা?
সাইফুর রহমান সোহাগ : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্য থেকে ২২টির মতো প্রতিষ্ঠানে আমরা কমিটি দিয়েছি, বাকিগুলো ২০১৭ সালের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করি।
এনটিভি অনলাইন : এই কমিটি দিতে গিয়ে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো জটিলতা হয় কি না?
সাইফুর রহমান সোহাগ : এখন আর হয় না।
এনটিভি অনলাইন : একটা অভিযোগ আছে যে, ছাত্রত্ব শেষ তারপরও ছাত্রলীগ করে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : সেটা কেমন? এক সাবজেক্টে মাস্টার্স শেষ অন্য সাবজেক্টে কি মাস্টার্স করতে পারি না?
এনটিভি অনলাইন : সেটা হতে পারে কিন্তু একেবারে পড়াশোনা শেষ। চাকরি করছে, এমন লোকও ছাত্রলীগ করছে…
সাইফুর রহমান সোহাগ : এমন একজনও নেই।
এনটিভি অনলাইন : আপনাদের কমিটিতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আছেন, এটা তো গঠনতন্ত্র বিরোধী…
সাইফুর রহমান সোহাগ : না, আপনি তাহলে জানেন না বোধহয়। গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁরা ছাত্রলীগ করতে পারবেন না। আর একটা ছেলে ছাত্রলীগ করে, সে কি পার্টটাইম কিছু করতে পারে না? কোচিং করাতে পারে না? বিভিন্ন চাকরি করতে পারে না? পড়ালেখার পাশাপাশি তো অনেক কিছুই করতে পারেন আপনি।
এনটিভি অনলাইন : কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ কিন্তু বিভিন্ন স্থানে কমিটি এখনো হয়নি। কিছুদিন আগে আপনার কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক হিসেবে কয়েকজনকে মনোনীত করেছেন। এতে করে কেউ কমিটির শুরুতে থেকে কাজ করছে। আর এরা কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে একটা বৈষম্য তৈরি হয় না?
সাইফুর রহমান সোহাগ : বর্ধিত হবে না? অনেকে তো ১০০ বছর কাজ করে আবার অনেকে ২০ বছর কাজ করে মারা যায়। এটা তো হয়।
এনটিভি অনলাইন : সারা দেশে যে যে অঞ্চলে কমিটি হয়নি সেগুলোর কী অবস্থা?
সাইফুর রহমান সোহাগ : সেগুলো এ মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে।
এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আপনাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে এমন অভিযোগ আছে। কেউ কেউ বলছে।
সাইফুর রহমান সোহাগ : মানে?
এনটিভি অনলাইন : মানে হচ্ছে উনি নাকি প্রায় সময়েই আপনাদের শাসাচ্ছেন? ফেসবুকেও এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারাও এসব শেয়ার দিচ্ছেন ফেসবুকে।
সাইফুর রহমান সোহাগ : ফেসবুকে কী হচ্ছে সেটা বিষয় না। এটা ১০০ পার্সেন্ট মিথ্যা কথা।
এনটিভি অনলাইন : তবে যে ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ের নেতারা বলছেন ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কারো তোয়াজ করে না..
সাইফুর রহমান সোহাগ : এটা কেউ বলেনি। এটা বাড়াবাড়ি।
এনটিভি অনলাইন : আপনারা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ছাত্রলীগের মাঝে পড়াবেন…
সাইফুর রহমান সোহাগ : সেটা তো কমপ্লিট। এরই মধ্যে সবার হাতে পৌঁছেছে। সবাই পড়েছেও। তারপরও যদি কেউ না পেয়ে থাকে, আগ্রহ দেখালে আমরা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি। আমরা এখন বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ নিয়ে কাজ করছি। সেটাও সবার হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি।
এনটিভি অনলাইন : আরেকটা অভিযোগ আছে যে, ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব আছে, এক ধরনের বিভাজিত মনোভাব নিয়ে আপনারা আছেন অর্থাৎ আপনাদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
সাইফুর রহমান সোহাগ : মানে?
এনটিভি অনলাইন : মানে হলো আপনি এবং আপনাদের সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একটা দূরত্ব আছে..
সাইফুর রহমান সোহাগ : সে দূরত্ব করল কে?
এনটিভি অনলাইন : আপনার বক্তব্য জানতে চাই
সাইফুর রহমান সোহাগ : অভিযোগটা কে করেছে? যে করেছে সে দোষী।
এনটিভি অনলাইন : আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, আপনাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই?
সাইফুর রহমান সোহাগ : না। সেটা অসম্ভব। সে আমার ছোট ভাই। একেবারের কাছের ছোট ভাই। আমরা এক হলের। তার বাড়ি সিলেটে, আমার বাড়ি মাদারীপুরে। তার সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্বের প্রশ্নই আসে না। ২৪ ঘণ্টা একসঙ্গে কাজ করছি। শুধু আমাদের মধ্যেই না, আমাদের পরিবারের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ আছে। কিছু লোক এসব বলে আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি, গত মেলায় ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস’ নামে আপনি একটি বই প্রকাশ করেছেন। সে চিন্তা আপনার মধ্যে এলো কেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : আসলে ছাত্রলীগ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে মানুষের মাঝে। অনেক ইতিহাস বাদ পড়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও অনেক বই লিখেছেন আপনি জানেন। তিনি বারবার আমাদের লেখাপড়া করা এবং লেখালেখির জন্য বলছেন। সে তাগিদ থেকেই লেখা।
এনটিভি অনলাইন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সাইফুর রহমান সোহাগ : আপনাকেও ধন্যবাদ।