ফের চেয়ারে বসলেন মেয়র মান্নান
তৃতীয় দফায় মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তিনদিন পর আজ সোমবার ফের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসেছেন অধ্যাপক এম এ মান্নান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মান্নাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তিনি হাইকোর্টে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাসের জন্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করেন আদালত।
এ সময় মেয়র মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনি লড়াই বিজয়ী হয়ে ফের মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। যেহেতু সিটি নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় রয়েছে সেহেতু রাস্তাঘাট, পানি নিষ্কাশনসহ অতি জরুরি কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন করা হবে।’
এর আগে মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান নগর ভবনে আসবেন এমন খবরে আজ সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশনের সামনে এসে উপস্থিত হন। দুপুর ১টার দিকে অধ্যাপক এম এ মান্নান নগর ভবনের ফটকের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মী, কাউন্সিলররা এবং সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি নগর ভবনে নিজ দপ্তরে গিয়ে নিজ মেয়রের চেয়ারে বসেন এবং কিছু সময় কাটান।
এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ‘আমাকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই আদেশ প্রত্যাহার কিংবা দায়িত্ব হস্তান্তর সংক্রান্ত কোনো আদেশ মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত আমার হাতে পৌঁছেনি। নিয়ম অনুযায়ী আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নতুন আদেশ জারি হওয়ার কথা। মন্ত্রণালয় থেকে যে আদেশ আমায় দেওয়া হবে, আমি সে আদেশ পালন করব।’
জানা গেছে, গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ২০১৩ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত ৪ বছরে তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হন এবং প্রায় ২২ মাস কারাভোগ করেছেন। তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৮ মাস ১৯ দিন। নাশকতাসহ একাধিক অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা রয়েছে।
নাশকতার এক মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট অধ্যাপক মান্নানকে প্রথমবারের মতো সাময়িক বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ২৮ মাস পর মেয়র পদ ফিরে পান এম এ মান্নান। কিন্তু এর পর পরই আরো একটি মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধেও আইনি লড়াই করেন মান্নান। গত ১৮ জুন পুনরায় পদ ফিরে পান তিনি। কিন্তু এর কয়েকদিনের মধ্যে দুর্নীতির একটি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার ১৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চতুর্থ বছর পূর্তির দিন গত ৬ জুলাই অধ্যাপক এম এ মান্নানকে মেয়রের পদ থেকে ফের সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান। শুনানি শেষে গতকাল রোববার হাইকোর্ট এ বরখাস্তের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে বরখাস্ত করা কেন বেআইনি হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
যাত্রীবাহীবাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মেয়র এম এ মান্নানকে ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩০টি মামলা করা হলেও সব কটি মামলায় তিনি জামিন লাভ করেন।
নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।