রোডম্যাপ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগামী দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন সিইসি।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, ৩১ জুলাই বিকেল ৩টা থেকে সুশীল সমাজের সঙ্গে ইসির বৈঠক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইসি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মপরিকল্পনাটি বই আকারে প্রকাশ অনুষ্ঠানে কে. এম. নুরুল হুদা বলেন, ‘এটি একটি সূচনা দলিল। নির্বাচনের পথে কাজের জন্য এ কর্মপরিকল্পনাই সব নয়। সংশোধন-পরিমার্জন করে সবার মতামত নিয়ে আমরা কাজ করে যাব।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইন দ্বারা পরিচালিত নির্বাচন কমিশন। এ মুহূর্তে সরকারের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। রাজনৈতিক দলগুলো মিছিল-মিটিং করার কোনো অধিকার না পেলে তাতে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই, কেননা তফসিল ঘোষণার পর তা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। আমাদের প্রস্তুতিমূলক পন্থা হিসেবে এটা গ্রহণ করেছি। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আলোচনা করতে বসতে পারেননি, এইগুলো আমাদের বিষয় না। এইগুলো সরকারি বিষয়। আমরা শুধু নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করি। কীভাবে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়, শুধুই সেটা নিয়ে ভাবি।’
নির্বাচন কর্মকর্তাদের বদলি পদোন্নতির বিষয়ে কমিশনের সবার মধ্যে সমন্বয়ের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির অধীনে প্রশাসনিকসহ সব ধরনের কাজের তদারকি শুরু হবে বলে জানান কে. এম. নুরুল হুদা।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিন নির্বাচনী আইন-বিধি অনুযায়ী আমরা কাজ করব। এ মুহূর্তে সরকার কীভাবে পরিচালনা হবে ও রাজনৈতিক কর্মপরিবেশের বিষয়গুলো আমাদের এখতিয়ারে নয়।’ সরকারের কর্মকাণ্ডে এখনই কমিশন হস্তক্ষেপ করা হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে আগামী নির্বাচন শুধু সরকার কেন, রাজনৈতিক দল বা যেকোনো দেশি-বিদেশি সংস্থার প্রভাব থেকে অবস্থায় করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন সিই্সি। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত রোডম্যাপের সাতটি অনুষঙ্গ ধরে কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পর ইসির কাজে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা এলে তখন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের নেতার বাসায় আয়োজিত ‘চা চক্রে’ পুলিশি বাধার বিষয়টি উল্লেখ করে এ সম্পর্কে সিইসির মত জানতে চান সাংবাদিকরা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের বিষয়। আমরা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ বজায়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এখন সরকারের কাছে কোনো অনুরোধ থাকবে না। তবে তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতির প্রয়োজন হলে অনুরোধ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি জানান, মেয়াদ শুরু পর থেকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রেখে সব কাজ করেছেন তাঁরা। নিজেদের সততা ও শক্তির প্রমাণ দিতে সবার সহযোগিতাও চান তিনি।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও শাহাদত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।