‘শিক্ষিত নারীদের রাজনীতিতে আসার মানসিকতা কম’
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তরুণ অপু উকিল। সেখানে শেখ হাসিনার ভাষণ শুনেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি করার।
এভাবেই এনটিভি অনলাইনকে নিজের রাজনীতিতে আসার গল্প শোনাচ্ছিলেন যুব মহিলা লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। জানালেন, পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তরুণ বয়সে লেখালেখি করতেন তিনি। বিশেষ করে ইত্তেফাক ও বাংলার বাণী পত্রিকার সাহিত্য পাতায় লেখা পাঠাতেন। লিখতেন কবিতা। যার প্রধান উপজীব্য ছিল রাজনীতি। কিন্তু সার্বিকভাবে সাধারণ নারীদের মধ্যে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ কম। আর এ জন্য পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং সামাজিক নানা প্রতিকূলতাকে দায়ী করলেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহম্মদ আকবর।
রাজনীতিতে নারীদের পথ কি মসৃণ? এনটিভি অনলাইনের এই প্রশ্নের জবাবে অপু উকিল বলেন, ‘একজন নারী রাজনীতিতে আসতে চাইলে তাঁকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং সামাজিক নানা কারণে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার মানসিকতা ইদানীং তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি বলব, শিক্ষিত নারীদের রাজনীতিতে আসার মানসিকতা অনেক কম। আধুনিক নারী পড়াশোনা করেই চাকরির কথা ভাবে। তারা কখনোই রাজনীতির কথা চিন্তা করে না।’
এই প্রবণতা রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যেও দেখা যায় বলে উল্লেখ করেন যুব মহিলা লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এমনকি ছাত্র রাজনীতি করেন এমন অনেকের মধ্যেও এ প্রবণতা দেখা যায়। নারীরা যদি রাজনীতিতে না আসেন তাহলে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ করা কষ্টকর হয়ে যায়।’
আর এ জন্য সমাজকেও দায়ী করলেন অপু উকিল। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দেখা যায়, বিয়ের পর স্বামী, স্বামীর পরিবার এবং নিজের পরিবারের বাধার কারণে নারীরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়।’
এ সময় দেশের ইতিহাসে নারীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান রয়েছে। নারীরা নিজেদের চেতনাবোধ থেকেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। তাই নারীদের যদি সামাজিকভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলে তারা রাজনীতিতে আরো বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবেন।’
দেশে এখন নারীদের রাজনীতির জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন অপু উকিল। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব সময়ই কাজ করেন। এ ধরনের বিভিন্ন সুযোগে আমরা ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছি।’
রাজনীতিতে আগ্রহী নারীদের প্রতি অপু উকিল কী আহ্বান জানাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন যারা আসবে তাদের প্রথমে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হবে। প্রথম বাধা পরিবার থেকেই আসবে। পরিবার বলবে, তুমি হামলার শিকার হবে। দল যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তখন অন্য দল চড়াও হবে। তোমার কারণে আমরাও (পরিবার) লাঞ্ছিত হবে। কিন্তু রাজনীতি থেকে সরে না গিয়ে পরিবারকে বোঝাতে হবে। বলতে হবে যে, আমরা আদর্শের জন্য রাজনীতি করব। তাদের বলতে হবে আমাদের দেশের জন্য দায়বদ্ধবতা রয়েছে। আগামীর জন্য কিছু দিতে চাই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই রাজপথে নেমেছি।’
অন্যদিকে যেসব নারী রাজনীতিতে আগ্রহী কিন্তু প্লাটফরমের অভাবে সরাসরি যুক্ত হতে পারছেন না, তাঁদের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান অপু উকিল। তিনি বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরাই আপনাদের সুযোগ করে দেব।’