মুক্তামনি ভালো আছে, খাচ্ছে
বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনি প্রথম অস্ত্রোপচারের পর এখন কিছুটা ভালো আছে। তরল খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত স্বাভাবিক খাবারও তাকে দেওয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা রক্তক্ষরণের যে আশঙ্কা করেছিলেন, এখনো তেমন কিছু হয়নি। তবে এ শঙ্কা যায়নি।
আর এ সপ্তাহের শেষেই আবার চিকিৎসকরা বসবেন প্রথম অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সব বিষয় পর্যালোচনার জন্য। তারপরই পরবর্তী অস্ত্রোপচারের সময় জানা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মুক্তামনির অপারেশন হয়। তখন তার হাতের বাড়তি অংশ কেটে ফেলা হয়। অপারেশন শেষে তাকে দ্বিতীয় তলার নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৫ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে।
আজ সকালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন মুক্তামনিকে দেখতে যান। পরে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সকালে তাকে দেখে এসেছি। এখন তো সে ভালো আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমন আছ। সে বলেছে, ভালো আছি। আমার খিদা লাগছে।’
‘আজ সকালে মুক্তামনিকে তরল খাবার দেওয়া হয়েছে। সে খেয়েছে। আমরা যে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা করছিলাম, তা এখনো হচ্ছে না। এটা ভালো ব্যাপার। তবে সেই শঙ্কা এখনো আছে। আবার তার অপারেশন করতে হবে। তবে সেটা কবে হবে, তা এই সপ্তাহের শেষে জানা যাবে’, যোগ করেন সামন্ত লাল সেন।
মুক্তমনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মেয়ে ভালো আছে। সকালে ডাক্তার নিয়মিত খাবারের নির্দেশ দিয়েছেন। তার জন্য দেশবাসীকে দোয়া করতে বলবেন। আমার মেয়েটা যেন তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।’
এর আগে গত ৫ আগস্ট সকালে মুক্তামনির ডান হাতের বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। এরপর ৮ আগস্ট মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার বায়োপসি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়।
তখন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন ও ইউনিটের প্রধান ডা. আবুল কালাম জানিয়েছিলেন, মুক্তামনির জীবন রক্ষার্থে যদি তার রোগাক্রান্ত হাতটি কেটে ফেলতে হয়, তবে তা-ই করবেন তাঁরা। অবশ্য হাতটি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।
হাত রেখেই শুধু বাড়তি মাংস কেটে ফেলে প্রথম অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকরা।
গত মাসে সাতক্ষীরা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তামনিকে সরকারি উদ্যোগে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বহনের কথা জানান।
মুক্তামনিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমের তাঁর শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেখেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারে করতে আগ্রহী নন বলে জানান। তখন ঢামেকের চিকিৎসকরাই সাহস করে মুক্তামনির অস্ত্রোপচারে এগিয়ে আসেন।
মুক্তামনি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে। তার এখন ১২ বছর বয়স। ছয় মাস বয়সে তার ডান হাতে একটি গোটা দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেটি তার হাত থেকে বড় হয়ে যায়। ফলে চলাফেরা করতে সমস্যা দেখা দেয়। গত প্রায় তিন বছর ধরে সে বিছানায় ছিল। গণমাধ্যমে এ খবর আসার পর সবাই মুক্তামনির রোগটির ব্যাপারে জানতে পারে।