বেহাল গাবতলী-আসাদগেইট সড়ক
রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকার নতুনবাজারের বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম। দাপ্তরিক কাজে প্রতিদিন তাঁকে যেতে হয় নিকুঞ্জে। তবে ইদানীং ঘর থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
মুজাহিদুল ইসলাম এনটিভির কাছে বললেন, ‘আগে আমি কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গণভবনের পাশের সড়ক ধরে অফিসে যেতাম। কিন্তু দুই মাস ধরে সে অবস্থা আর নেই। টেকনিক্যাল থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই খোঁড়াখুঁড়ি আর ভাঙার কারণে কোনো সড়কই এখন আর ব্যবহারযোগ্য নেই। ফলে আগারগাঁও ষাট ফিট সড়ক দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেখানেও সড়ক ভাঙা।’
একজন মুজাহিদুল ইসলামকে উদাহরণ হিসেবে বলা হলেও, রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়ক থেকে গাবতলী টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী সবাইকেই পড়তে হচ্ছে এমন ভোগান্তি। দুই মাস আগে শুরু করা পয়ঃনিষ্কাশনের লাইনের বর্ধিতাংশ সংস্কারের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করলেও, এখনো সে কাজ শেষ হয়নি। বরং সড়কের বিভিন্ন জায়গায় এখনো পড়ে আছে নির্মাণসামগ্রী।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে মিরপুর রোডের ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর মোড় থেকে গাবতলী টার্মিনাল মোড় পর্যন্ত দেখা গেছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও নজরে আসেনি সমতল সড়ক। স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালানো কঠিন এখন এই সড়কে। তার ওপর বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে আরো খারাপ অবস্থা তৈরি হয়। যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহনও। তবে সিটি করপোরেশনের দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা হবে।
ধানমণ্ডি এলাকারই আরেক বাসিন্দা নিয়ামত উল্লাহ। গেল সপ্তাহে দাপ্তরিক কাজে ঢাকা থেকে বগুড়া গিয়েছিলেন তিনি। এনটিভি অনলাইনকে জানালেন, কারওয়ানবাজার থেকে সংসদ ভবন পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সড়কের অবস্থা খারাপ। বিশেষ করে কলেজগেট পেরিয়ে যাওয়ার পর গাবতলী টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। গাড়িতে বসে থেকেও শরীর ব্যথা হয়ে যায়। একইভাবে ফিরতি পথে টেকনিক্যাল মোড় থেকে শ্যামলী শিশুমেলা পর্যন্ত সড়ক বলা যেতে পারে চলাচলের অনুপযোগী।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের সামনে এবং রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের সামনের রাস্তায় রয়েছে ছোট ছোট গর্ত। বাবর রোড, গজনবী রোড, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে রাস্তাজুড়ে ছোট ছোট খানখন্দ। শ্যামলী মোড় থেকে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে গাবতলী পর্যন্ত সড়ক গাড়ি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। কখনো কোনো গাড়ি সরাসরি এ সড়কে চলতে পারছে না বলে জানায় এলাকাবাসী। একই সঙ্গে শ্যামলী থেকে কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ফুটপাতও দখলে হয়ে যাওয়ায় হেঁটে চলাটাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে সাধারণ জনগণের।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ড চিং চিং বলেন, নিজের কাজেই কল্যাণপুর থেকে প্রায়ই আমাকে আজিমপুর যেতে হয়। দুই বছরের বাচ্চাকে নিয়ে এ সড়কে চলাচল করাটা খুবই কষ্টকর। এক তো সড়ক ভাঙা, তার ওপর যানজট। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর দূরপাল্লার বাস আসার কারণে এ যানজট লাগামহীন হয়ে পড়ে।
কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডের সামনে কথা হলো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভ্র নন্দীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ড্রেন তৈরির জন্য সড়ক খোঁড়া হচ্ছে বলে শুনেছি। হয়তো এটির কাজ শেষ হলে সমস্যার সমাধান হবে। তবে না হওয়া পর্যন্ত আমরা খুবই ভোগান্তিতে আছি। ভাঙা সড়কের কারণে এখানে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে|’
কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে মিরপুর মাজার রোডের দিকে পুরোনো গাবতলী পর্যন্ত এবং পুরাতন গাবতলী অংশ থেকে মিরপুর-১ নম্বর পর্যন্ত অংশে গেলে দেখা যায়, মাজার রোডের প্রথম কলোনি এলাকায় পাইপ বসানোর নির্মাণসামগ্রী এলোমেলোভাবে সড়কের ওপর রেখে দেওয়া হয়েছে। আর ড্রেনের জন্য সড়ক খোঁড়ার কারণে আশপাশের রাস্তাতেও এর প্রভাব পড়েছে। চারপাশে ভাঙা স্ল্যাব, রড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
সেখানে দাঁড়িয়ে কথা হয় মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র মোস্তফা কামালের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘কিছুদিন আগে অ্যাক্সিডেন্ট করায় আমরা ব্যাক পেইন হয়েছে। তার উপরে এ ভাঙা সড়ক পেরিয়ে ক্লাস করতে আসার ফলে এ ব্যাথা আরো বেড়েছে। এসব দেখে মনে হয়, এ শহরের কোনো অভিভাবক নেই।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সড়ক ভাঙা, এটি অস্বীকার করছি না। তবে আমারা ড্রেনেজের কাজ করছি, সেটি সম্পন্ন হলে এ এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর হবে। সে সঙ্গে ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়কের কাজে হাত দিতে পারছি না। সে সঙ্গে বর্ষা মৌসুমের ফলে আমাদের কাজে ধীরগতি রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ড্রেনেজ ও সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’