১৭ বছর পর আবার এক ছাদের নিচে
ছয়টা বছর কেটেছে একসঙ্গে। সকাল থেকে দুপুর। আবার অনেকে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত। ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হল। এরপর যে যার লক্ষ্যের দিকে দৌড়। অনেক কিছু হয়েছে, এক ছাদের নিচে আসা হয়নি আর।
১৭ বছর পর এলো একটা দুপুর আর একটা সন্ধ্যা। এক ছাদের নিচে জড়ো হলো সবাই। একই পোশাকে। ১৭ বছর আগের পোশাকটা ছিল সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট। আর এবারও একই পোশাকে। রঙিন জার্সি। গায়ে লেখা ‘অটুট বন্ধন ২০০০ ব্যাচ।’
একে অন্যকে দেখে প্রথমে একটা দীর্ঘশ্বাস। পরে গল্প শুরু। ১৭ বছরের আগের কথা, ১৭ বছরের কথা। কত কথা জমে আছে!
কুমিল্লা জিলা স্কুলের ২০০০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক হলো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে। নজরুল ইনস্টিটিউটে আয়োজন করা হয় ওই উৎসবের। ১৭ বছরে কেউ চিকিৎসক, কেউ শিক্ষক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ সরকারি কর্মকর্তা, কেউ প্রবাসী, কেউ নাবিক। কিন্তু পেশা ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠল স্কুলের স্মৃতি। ধর্মসাগরের পাড়ে, বড় মাঠের ওই স্কুলটা নিয়ে আছে কত স্মৃতি।
স্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। পরে আনন্দ মিছিল নিয়ে নজরুল ইনস্টিটিউটে যান ২০০০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
বিশাল কেক কেটে শিক্ষক ও ছাত্ররা অনুষ্ঠান ‘অটুট বন্ধন ২০০০ ব্যাচ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
মহিবুবুল হক ছোটন ও রাইসুল ইসলাম নাবিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান ছিল বেশ প্রাণবন্ত। প্রকৌশলী মাহফুজুল হক মাসুমের নকশায় করা মঞ্চে ছিল প্রাণের স্পন্দন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া শিক্ষক ও বন্ধুদের স্মরণ করে শোকগাঁথা পাঠ করেন পিয়াস মজিদ।
পুনর্মিলনীতে সম্মাননা জানানো হয় স্কুলের শিক্ষকদের। তাঁদের অনেকেই বর্তমানে জিলা স্কুলের শিক্ষক নন। কিন্তু ২০০০ ব্যাচের জন্য ওই শিক্ষকরা ছিলেন অন্যতম পথপ্রদর্শক। ছিলেন জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার।
অন্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন মমতাজুর রহমান, এ কে এম হাবিব উল্লাহ, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মোসলেহ উদ্দিন, তাজুল ইসলাম, খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, আবদুর রহিম, আবদুল ওয়াহাব, আসমা আক্তার, সুদীপ্তা রানী রায়, আজিজুন্নেসা।
শিক্ষকরা বললেন, ‘ছাত্র সফল হলেই শিক্ষক সার্থক। আর ছাত্র যখন জ্ঞানে ও গরিমায় শিক্ষককেও অতিক্রম করে, তখন শিক্ষক গর্ববোধ করেন। শিক্ষকের অহংকার সেখানেই। তোমাদের কথা শুনি। তোমাদের নিয়ে গর্ব করি।’
প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার বলেন, ‘প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে তোমরা সব সময় স্কুলের উন্নয়ন নিয়ে পরামর্শ দেবে এই আশাই আমরা করি।’
শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ২০০০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
প্রথম পর্ব শেষ হতেই মুক্তমঞ্চে শুরু হয় গানের আসর। শিক্ষক আবদুর রহিম তাঁর প্রিয় পুরানো ছাত্রদের জন্য গান গেয়ে শোনান। পরে স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ছিল বন্ধুদের স্মৃতিচারণা। কখনো আবেগে কেঁপেছে কারো কণ্ঠস্বর, কখনো পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া বন্ধুর জন্য চোখের পানিও পড়েছে। কখনো মনে পড়েছে পড়াশোনা নিয়ে সংগ্রামের কথা, খেলার কথা। দিনগুলো যে কখনো ভুলে যাওয়ার নয়।
ব্যাচ ২০০০-এর পক্ষ থেকে একই ব্যাচের বশিরুল আলম পাটোয়ারী, হাসানুজ্জামান তানিন, জুয়েল কাজী, আলী রেজা হায়দারকে সম্মাননা জানানো হয়। এ ছাড়া রিয়াজ উদ্দিন, শাহাদাত সোহাগ, সাইদুল হককে বিশেষ ধন্যবাদ দেওয়া হয়। তাঁদের দিনরাত পরিশ্রমেই যে ১৭ বছর পর এক ছাদের নিচে আসা হলো।
অনুষ্ঠানে দ্রুতই একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।