‘ওখানে মেয়েদের জীবন নেই, বাবা’
‘মেয়েদের ছাড়ে না ওরা। উঠতি বয়সের মেয়ে। ঘরের বউ যার আছে, সে শেষ। মেয়েদের তো ধর্ষণ করেই। এর পরেও ক্ষমা নেই। ওখানে মেয়েদের জীবন নেই, বাবা।’
দুদিন হলো কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালংয়ে এসেছেন মদিনা খাতুন। ক্যাম্পের বাইরে রাস্তায় রাস্তায় দিন-রাত কাটছে তাঁর। বয়স পঞ্চাশের বেশি হবে। সোমবার তিনি এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলেন।
মিয়ানমারে মদিনা খাতুনের গ্রামের নাম রাসিদং। ঈদের পরই তাঁর স্বামী হাবিব উল্লাহকে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনারা। তাঁর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে দুই ছেলে নিখোঁজ। আসার সময়েও কোনো খোঁজ পেলেন না। এখন ভেবে নিয়েছেন, ওরা আর নেই। দুই ছেলের বউও আছে। তাদের ফেলে আসেননি মদিনা। তাঁর ভাষ্য, মেয়েদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয় ওই এলাকা।
কুতুপালং ক্যাম্পের উল্টোপাশের সড়কে খাবারের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিলেন মদিনা। স্বামী কোথায় প্রশ্ন করতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
‘বাবা, ওরা মেরে ফেলেছে ওকে। গুলি করে মেরে ফেলেছে’, বলেন মদিনা।
মিয়ানমারের সেনারা কী ধরনের নির্যাতন করে—জানতে চাইলে মদিনা বলেন, ‘মেয়েদের ওপর ওদের চোখ পড়ে বেশি। মেয়েদের ইচ্ছামতো ধর্ষণ করে। বড় বীভৎস সে দৃশ্য। সবার সামনে মেয়েদের ইজ্জত-সম্মান নিয়ে খেলা করে।’
মদিনা জানান, নারীদের ধর্ষণ করার পর গলা কেটে হত্যা করে সেনা ও তাদের লোকজন। শুধু তাই নয়, নারীদের স্তন কেটে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর দেখে ওই নারী কী করে। তীব্র মৃত্যুযন্ত্রণা দিয়ে আনন্দ করে এক পর্যায়ে মেরে ফেলে।
মদিনা জানান, তাঁর এক প্রতিবেশী নারী শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছিল। সেনারা ওই নারীর দুই স্তন কেটে দেয়। পরে ওই শিশুকে ঠেলে দেয় নারীর বুকে। এসব বীভৎস দৃশ্য তাদের খুব ভালো লাগে। এমনও দৃশ্য মদিনা দেখেছেন, যেখানে নারীকে ধর্ষণ করে শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। তার পর ওর পুড়ে মারা যাওয়া দেখে।
মদিনা বলেন, যেসব ঘরে মেয়ে আছে, সেসব ঘরের মানুষ খুব কমই মেয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পেরেছে। প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ মারা গেছে সেনাদের গুলিতে।