রোহিঙ্গাদের ১৫ গরুর দাম মাত্র ৪ লাখ!
মিয়ানমারের সীমান্তের কাছে কক্সবাজারের উখিয়ার আনজুমানপাড়া গ্রাম। বাংলাদেশে যেসব পথ দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে, এটি তার একটি। দীর্ঘপথ হেঁটে এসে ওই গ্রামের ছায়ায় বিশ্রাম নেয় রোহিঙ্গা পরিবারগুলো।
গতকাল সোমবার গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেল। তবে ওই বিশ্রামের মধ্যেই রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে সেরে নিতে হয় ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি। আর এ নিয়েই ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোটখাটো সিন্ডিকেট।
কাঁচা পথের একপাশে ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে রোহিঙ্গা পরিবার। অন্যপাশে সবুজ চত্বরে চড়ছে প্রায় ১৫-২০টি গরু। গরুগুলো মাঝারি আকারের। বাছুরও আছে। পথের পাশেই একটি বাড়িতে গেলেন কয়েকজন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দা। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছে গরুগুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে হাতে থাকা নোটবুক আর কলমের দিকে তাকালেন। জানালেন, এগুলো এ গ্রামেরই গরু। চড়তে চড়তে এখানে এসেছে।
এরও কিছু সময় পর এক ব্যক্তিকে দেখা গেল, ছোট ছড়ি (লাঠি) দিয়ে গরুগুলোকে একপাশে নিয়ে আসছেন। তাঁর নাম জলিল। পরিচয় গোপন করে গরুগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চার লাখ টাকা দিয়ে ১৫টি গরু কিনেছেন তিনি। কার কাছ থেকে কিনলেন—জানতে চাইলে জলিল বলেন, তিনি গরুর বেপারী। ওই উপজেলায় থাকেন তিনি। গরুর খোঁজ পেলে কেনার চেষ্টা করেন।
জলিল জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যম থেকে কিছুক্ষণ আগেই গরুগুলো কিনেছেন। এসব পাহাড়ি এলাকা থেকে আসে বলে দাবি করেন তিনি।'
মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়েতের পরিবর্তে টাকা নিচ্ছেন এক রোহিঙ্গা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
‘এতগুলো গরু কিনে করবেন কী?’
জলিল বলেন, ‘খাওয়াব, আরো একটু স্বাস্থ্যবান করব। ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।’
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বলা হয় পাহাড় থেকে গরু আসে। কিন্তু অনেক রোহিঙ্গা আসার সময় চেষ্টা করেন গরু নিয়ে আসার জন্য। কষ্ট করে আনতে পারলে তা এখানে বিক্রি করা যায়। আর ওই টাকা দিয়ে পরিবারের একটা খরচের ব্যবস্থা হয়। সেই গরুর দাম নির্ধারণও হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে।
আনজুমানপাড়াতেই দেখা গেল, এক ব্যক্তি নগদ টাকা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারো বাংলাদেশি টাকা লাগবে কি না জানতে চাইছেন। এ ব্যাপারে জানতে গেলেই তিনি সরে গেলেন। কিন্তু একটু অনুসরণ করেই চোখে পড়ল ওই ব্যক্তির কাজ।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের কাছে মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়েত আছে, তাদের বদল করে টাকা দিচ্ছেন। রসুল নামের এক রোহিঙ্গা এক লাখ কিয়েত তুলে দিলেন ওই ব্যক্তির কাছে। বিনিময়ে পেলেন তিন হাজার টাকা। তখনই মুদ্রা বিনিময় হার দেখা হলো। সেখানে দেখা যায়, এক লাখ কিয়েতের পরিবর্তে ছয় হাজার ৫১ টাকা পাওয়ার কথা; কিন্তু পেল তার অর্ধেক। এ ব্যাপারে কোনো রোহিঙ্গা কথা বলতে চাইলেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, টাকার বিনিময় নিয়ে রোহিঙ্গারা কোনো দরকষাকষি করে না। কোনোমতে প্রাণ নিয়ে এসেছে। এখন কিছু টাকা থাকলে খেতে পারবে। জোরে কথা বলার শক্তিটুকুও নেই তাদের।
ওই ব্যক্তি জানালেন, কষ্ট করে কুতুপালং ক্যাম্পে গেলেই কিয়েত ভাঙানোর ভালো ব্যবস্থা আছে। আসল টাকাটাই পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা ওদের কানে পৌঁছানোর আগেই সিন্ডিকেট এদের কিয়েতটা নিয়ে নেয়।