‘সু চির বাবা ভালো মানুষ ছিলেন’
দেশ ছেড়ে চলে আসা রোহিঙ্গা আবদুল মজিদের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। কথা বলেন আঞ্চলিক ভাষায়, যা কক্সবাজার ও বান্দরবানের মানুষই কেবল বুঝতে পারে। তবে প্রমিত বাংলার কিছু শব্দও শিখেছেন। তিনি বললেন, ‘সু চির বাবা ভালো মানুষ ছিলেন।’ তিনি জানান, সু চির বাবা অং সান মারা যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা বেড়ে যায়।
বান্দরবানের গুনদুম সীমান্তে তমব্রু নদীর তীরে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আশ্রয় নিয়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ রোহিঙ্গা পরিবার। গত ২৪ আগস্টের পর থেকে ওই এলাকায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে, এটি তার একটি। কাঁটাতারের ওপারেই পাহাড়, যা মিয়ানমারের অংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়েও সেখানে দেখা যায় ধোঁয়া উড়ছে। রোহিঙ্গারা জানালেন, কোনো গ্রাম পুড়ছে। আগুন লাগিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।
তমব্রু নদীর তীরে গড়ে ওঠা অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকেন মজিদ। মিয়ানমারে যে এলাকায় তিনি থাকতেন, তার নাম রাইমনখালী।
মজিদ জানালেন, তিনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে চেনেন। তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা মিয়ানমারে। তিনি আরো জানান, সু চির কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা সেনাদের হাতে।
মজিদ জানান, সু চির বাবা অং সান মারা যাওয়ার পর বলা হলো, ‘দেশে কোনো রোহিঙ্গা নেই। বলল, ওরা বাংলাদেশি। আশ্রয়ের জন্য এসেছিল, আশ্রয় দিয়েছি। ওরা আমাদের সমান হতে পারবে না। তোমাদের কোনো অধিকার নেই এই দেশে (মিয়ানমার)।’
মজিদের মতো নিজ দেশের খোঁজখবর রাখেন মোহাম্মদ আরমান। তিনি একজন হাফেজ। রাইমনখালী এলাকায় যে মাদ্রাসায় তিনি পড়াশোনা করতেন, সে মাদ্রাসা ছিল তিনতলা ভবন। কিন্তু তা পুড়িয়ে দেয় মিয়ানমারের সেনারা।
আরমান জানান, মসজিদে আজান দিতে দেওয়া হয় না।
আরমান জানান, রোহিঙ্গাদের এলাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন মুসলিম রোহিঙ্গা। ২০১৫ সালের পর থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। অন্য এলাকা থেকে রোহিঙ্গা নয় এমন মানুষ এনে এলাকার জনপ্রতিনিধি করা হয়। এর পর থেকে নির্যাতন বাড়তে থাকে।
আরমান জানান, একসময় নির্বাচিত রোহিঙ্গা জনপ্রতিনিধিদের সম্মান দিতে বাধ্য থাকত সেনাসহ অন্যরা। কিন্তু তাদেরই বের করে দেওয়া হয়।
তাহলে বর্তমানে ওই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কোথায়—জানতে চাইলে আরমান জানান, এরা বিভিন্ন সময়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন; কেউ ইউরোপ, কেউ অন্য মহাদেশে।