নদী অন্তপ্রাণ ‘রিভারাইন পিপল’
‘অনেক রঙের পাল আছে, মাঝি? বাদামি? সোনালি? লাল? সবুজও? তা হলে সেটা দাও আজ, সোনালিটা দিয়ো কাল। সবগুলো নদী দেখাবে কিন্তু। আগে চলো পদ্মায়, দুপুরের রোদে রূপো ঝলমল সাদা জল উছলায়।’
উল্লিখিত লাইনগুলো কবি বুদ্ধদেব বসুর। তাঁর কবিতায় নদীর যে বর্ণনা উঠে এসেছিল, তা করেছিলেন, যে সৌন্দর্য দেখেছিলেন তা হয়তো অনেকাংশেই নেই এখন।
কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল আলীমের কণ্ঠে একসময় ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’ বলে যে গীত হতো, আজ নদীশাসনের অভাব কিংবা সুরক্ষার অভাবে তার ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে। এর পরও নদীর সঙ্গে মানুষের মিতালি কমেনি, জীবনের সঙ্গে আছে মিশে অবিচ্ছেদ্যভাবে। তাই তো, আশির দশকের শুরুতে কানাডায় নদী দিবস পালনের সূত্রপাত হয়।
১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও নদীপ্রেমিক মার্ক অ্যাঞ্জেলো তাঁর কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি নদীতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। তাঁদের অবিরত এই চিন্তার সমর্থন দিয়ে জাতিসংঘ ২০০৫ সালে এটিকে ‘আন্তর্জাতিক নদী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর প্রায় কয়েক বছর পর বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সেই যাত্রাটা শুরু করেছিলে ‘রিভারাইন পিপল’ নামের একটি সংগঠন। এর স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ রোকন।
শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে রোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নদীমাতৃক দেশে প্রতিদিনই নদী দিবস। আমাদের জন্য নদী যে আশীর্বাদ, তা প্রতিদিনই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এ জন্যই নদীর প্রতি আমাদের অঙ্গীকার হলো নদীকে পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু নানা কারণে আজ নদী বিপর্যস্ত। সে কারণেই আমরা এ দিবসটি নদীকে বাঁচানোর অঙ্গীকার থেকেই পালন করে আসছি।’
‘‘এই দিবসে মানুষকে জানাচ্ছি নদীময় শুভেচ্ছা। ২০০৯ সালে আমাদের ‘রিভারাইন পিপল’ এককভাবে যাত্রা শুরু করল। ২০১৪ সাল থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। ইতোপূর্বে প্রায় ৫০টা সংগঠন এই দিবসে আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নেয়। আজ (শনিবার) সারা দেশে নানাভাবে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। কিন্তু ভাবতে ভালো লাগে, আমরা শুরু করেছিলাম। আজও একই স্বপ্ন নিয়ে আমরা আছি।’’
এবারের কর্মসূচি সম্পর্কে শেখ রোকন জানান, শোভাযাত্রা, সভা, সেমিনার, স্বাক্ষরতাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে এই দিবসটি উদযাপিত হবে। তবে ঢাকায় এই শোভাযাত্রাটি একদিন আগে অর্থাৎ শনিবার বেলা ১১টায় শুরু হয়। এতে অংশ নেয় পরিবেশবাদী অর্ধশতাধিক সংগঠন। শোভাযাত্রাটি পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু হয়ে সদরঘাটে গিয়ে শেষ হয়। বাংলাদেশে এর প্রতিপাদ্য ‘দখল দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী; বাঁচবে প্রাণ ও প্রকৃতি।’
শেখ রোকন বলেন, ‘বিশ্ব নদী দিবস আন্তর্জাতিক নদী দিবস নয়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার পালিত হয়। সেই হিসেবে এ বছর ২৪ সেপ্টেম্বর নদী দিবস। আগামীকাল রোববার সাপ্তাহিক কর্মদিবস। কর্মমুখী মানুষের রাস্তায় চলাচলের যেন অসুবিধা না হয়, সে কারণে একদিন আগে শোভাযাত্রাটি করে থাকি। এবারেও তাই করেছি। কাল নদী দিবস সারা দেশে পালিত হবে। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাক্ষরতা অভিযান, সভা, সেমিনারের মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে শিক্ষার্থীরা।’
দেশে নদী রক্ষার আন্দোলন ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু হয়েছিল। আজ তা সারা দেশেই পালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে শেখ রোকন বলেন, ‘কেউ না কেউ শুরু করবে, এটাই স্বাভাবিক। নদী দিবস পালন বাংলাদেশে প্রথম শুরু করেছিলাম। আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে এটা ভেবে আশাবাদী হচ্ছি। এর মাত্রা আরো বেগবান হবে বলে আমার বিশ্বাস।’