৬৪ বছরের এই বুড়ো ঘাতক কে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরের একটি হোটেলের উন্মুক্ত স্থানে রোববার রাতে চলছিল গানের অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত ছিল হাজার হাজার দর্শক। গানের তালে তালে সবাই যখন আনন্দ-উদ্দীপনায় ব্যস্ত, তখন হঠাৎ তাদের দিকে ছুটে এলো মুহুর্মুহু গুলি। আকস্মিক এ হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ৫৯ জন। আর আহত হন ৫০০ জনের বেশি।
পাশের একটি হোটেলের বহুতল ভবন থেকে চালানো হয় হামলা। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন হামলাকারী। ওই ভবনেরই ৩২তলা থেকে মেলে তাঁর লাশ। কে এই হামলাকারী? কেনই বা চালালেন নৃশংস হামলা? তা অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। একে একে বের হয়ে আসে অনেক তথ্য।
পুলিশ জানায়, হামলাকারীর নাম স্টিফেন প্যাডক। নেভাদার মেসকুইট শহরে বসবাস করতেন তিনি। ৬৪ বছর বয়সী স্টিফেন একজন সাবেক হিসাবরক্ষক। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একাকী জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি।
হামলাকারী স্টিফেনের কোনো অপরাধের রেকর্ড পুলিশের কাছে নেই বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে পেশাদার জুয়াড়ি এ লোকটি ‘পাগলাটে’ গোছের ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। এ ছাড়া অনেক আগে থেকেই স্টিফেনের মানসিক সমস্যা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সেদিন রাতে হোটেলের ৩২তলার একটি কক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারের গুলি করছিলেন স্টিফেন। এর একপর্যায়ে পুলিশ তাঁকে বাধা দিতে পৌঁছালে নিজের ওপরই গুলি চালিয়ে দেন। সে সময় ওই কক্ষে ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার স্টিফেন ওই হোটেলে ওঠেন।
এদিকে, মেসকুইট শহরে স্টিফেনের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সহস্রাধিক গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া তাঁর বাসা ও গাড়ি থেকে বিস্ফোরকও পাওয়া যায়। সাবেক এই হিসাবরক্ষকের বিমান চালানো ও শিকার করার লাইসেন্সও ছিল বলে জানা গেছে।
বিবিসি জানায়, চলতি বছরেই লাস ভেগাস থেকে বেশ কিছু অস্ত্র কিনেছিলেন স্টিফেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর অনুসন্ধানের পরই তাঁকে ওই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে সেই অস্ত্রগুলো দিয়ে এমন ভয়ংকর হামলা চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। তাঁদের ধারণা, রোববারের হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র স্টিফেন অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।
এদিকে স্টিফেনের সঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে এফবিআই।
এদিকে, স্টিফেনের এ ধরনের কাজ বিস্ময়কর উল্লেখ করে তাঁর ভাই এরিক প্যাডক জানিয়েছেন, তাঁর ভাই সাধারণত জুয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তিনি একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন। আবাসন খাতে তাঁর অনেক বিনিয়োগ ছিল। তবে বন্দুকের প্রতি তাঁর নেশা ছিল না। তাই এ ধরনের হামলায় স্টিফেনের জড়িত থাকার বিষয়টা আশ্চর্যজনক।
এরিক আরো বলেন, তাঁদের দুই ভাইয়ের অপরাধের সঙ্গে সংযোগের কোনো ইতিহাস না থাকলেও তাঁদের বাবা একজন দাগি আসামি হিসেবে পুলিশের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। ব্যাংক ডাকাতির কারণে জেলও খাটতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি একবার জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের বাবা।
এনবিসি নিউজের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি জুয়া খেলতে গিয়ে প্রচুর অর্থ বাজি ধরেছিলেন তিনি। তবে সেই বাজি তিনি জিতেছিলেন কি না, তা জানা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেসকুইট শহরের বাড়িতে প্রেমিকা মারিলো ড্যানলের (৬২) সঙ্গে থাকতেন স্টিফেন। তবে হামলার সঙ্গে তাঁর প্রেমিকার কোনো সংযোগ নেই বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে স্টিফেন প্যাডক সম্পর্কে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে অনেক তথ্য আসে। তবে স্টিফেন কী কারণে এ হামলা চালিয়েছেন, তার কোনো জবাব মেলেনি। তাই হামলার মূল কারণ খুঁজতে মরিয়া মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।