‘উচ্ছ্বসিত’ বিএনপি, সাংগঠনিক তৎপরতা আওয়ামী লীগের
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে আগমন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের পর দেশের রাজনৈতিক চিত্রপট অনেকটাই বদলে গেছে। দুই দলের বর্তমান কর্মসূচি থেকে এমনটাই লক্ষ করা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সব দল নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ২০তম সম্মেলনের পর থেকেই দলকে নির্বাচনমুখী করতে জেলা উপজেলায় সাংগঠনিক সফরসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। পাশাপাশি বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশলের প্রতি তীব্র নজর রাখছেন নেতারা।
অন্যদিকে, বিএনপি দীর্ঘদিন সভা-সমাবেশের অনুমতি না পেলেও এখন তাদের কর্মসূচিতে তেমন বাধা থাকছে না। খালেদা জিয়ার দেশে আগমনের দিন (১৮ অক্টোবর) দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কোনোরকম বাধা ছাড়াই বড় কর্মসূচি পালন করেছে। গত ২৭ অক্টোবর খালেদা জিয়া গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। এ কর্মসূচির সমালোচনা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা ছিল না। এতে বিএনপির মধ্যে উচ্ছ্বসিত মনোভাব দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দল। দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে রাজনীতি করার কারণে এই দলটির জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে আগামীর যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন নেতারা।’
খালেদা জিয়ার দেশে আগমন উপলক্ষে জনসমাবেশ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর আওয়ামী লীগ নেতারা সমালোচনা করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সফরের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যূনতম দরদ নাই। তাদের প্রতি দরদ থাকলে বিনা কারণে তিন মাস বিদেশ থাকতেন না। মানবিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের কাছে যাচ্ছেন। ত্রাণ বিতরণের জন্য নয়, নেতাকর্মীদের গাড়িবহর নিয়ে ত্রাণ বিতরণকাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতেই সেখানে যাচ্ছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে আর কোনো অরাজকতা করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না।’
এদিকে, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিলেন, ‘বিএনপির অবস্থান কী তার প্রমাণ জনতার ঢল। জনতার ঢল, এই ঢলটা একেবারেই আওয়ামী লীগ পছন্দ করেনি। সেকারণে তারা সমালোচনা করছে। কারণ, ওরা তো ভোটারবিহীন সরকার। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জনগণ আসবে কেন? লাখো মানুষের ঢল হবে কেন? এটা প্রতিহিংসার জ্বালা।’
ভারত বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, সুষমা স্বরাজের এমন বক্তব্য ভারত তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে দাবি বিএনপির।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও মনে করেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাঁর মতে, সুষমা স্বরাজের মুখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলার অর্থ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে এ দেশে বার্তা দেওয়া।
বিএনপির এ মনোভাবের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিজের মধ্যে যদি এতটাই আশার উদয় হয়ে থাকে তাহলে নির্বাচনে আসুন। দয়া করে নির্বাচন বর্জন করবেন না।
সুষমা স্বরাজ যা চেয়েছেন আমরাও তাই চাই। আমরাও চাই একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ে বিশ্বাসী। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস জনগণের রায় নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসবে।’