সাঈদ খোকন-মুরাদ দ্বন্দ্ব চরমে, এবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের কর্মীদের সঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনটি মোটরবাইকে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ উভয় পক্ষের আটজনকে আটক করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার মধ্যকার বিভেদ আরেকবার স্পষ্ট হলো।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আজিমপুর পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে ১৮ নভেম্বর নাগরিক সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে ও নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ একটি বর্ধিত সভা আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতির কথা শুনে তিনি আসেননি। তবে বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বাধা দেওয়ার জন্য সভার সামনের রাস্তায় সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলে সভা ভণ্ডুল করার চেষ্টা করা হয়। পরে দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ময়লার স্তূপ কিছুটা সরিয়ে ওই কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করে সভার কার্যক্রম শুরু করেন।
এদিকে সভা চলাকালে মুক্তিযোদ্ধা অবমাননার অভিযোগ এনে শাহে আলম মুরাদের বহিষ্কারের দাবিতে মিছিল বের করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন কমিটির ব্যানারে সাঈদ খোকনের কর্মীরা। পরে মিছিলটি আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে মুরাদের কর্মীরাও পাল্টা মিছিল নিয়ে আজিমপুরের দিকে আসেন।
এ সময় পুলিশ সাঈদ খোকনের কর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলে তাঁরা তিনটি মোটরবাইকে (ঢাকা মেট্রো ল-১১-১২৬৮, ঢাকা মেট্রো ছ- ৪৯-৭৯১০ ও ঢাকা মেট্রো ল- ১৪-৬৭৬৭) আগুন ধরিয়ে দেন এবং বেশ কয়েকটি মোটরবাইক ভাঙচুর করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে।
ঘটনাস্থল থেকে উভয় পক্ষের আটজন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপকমিশনার ইব্রাহিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দুই পক্ষকে সরাতে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়তে হয়। পরে মিছিল থেকে আটজনকে আটক করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘আপনারা যেমন দেখছেন, আমরাও তাই দেখছি। ময়লা ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা সিটি করপোরেশনের কাজ কারবার?’
তবে, ময়লা ফেলার ঘটনা অস্বীকার করে মেয়র সাঈদ খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই কাজটি কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন করতে পারে না। যদি কেউ করে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার বিষয়ে তাঁর জানা নেই বলে জানান খোকন।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি বলেন, ‘মুরাদ পুলিশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যানার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা মুরাদের বহিষ্কার চেয়ে মিছিল করছিলাম। পুলিশ দিয়ে আমাদের সরিয়ে দিয়েছে।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘কারো কোনো অভিযোগ থাকলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। কিন্তু তা না করে যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।’
অন্যদিকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১/১১-এর সময় সাঈদ খোকন কিংস পার্টি করতেন। সে সময় শাহে আলম মুরাদ ২৫ হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেই থেকে বিভেদ দেখা দেয় মুরাদ ও সাঈদ খোকনের মধ্যে।’
মেয়র হওয়ার পর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মুরাদ পক্ষের নেতাদের দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব আয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হয় বলে জানান এই নেতা।
জানা গেছে, মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাঈদ খোকনের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাঁর লোকদের প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এই বিভেদ আরো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আজ অবধি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি এবং দুই পক্ষকে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। বিভেদ স্পষ্ট হয় মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধনের দিন। সেদিন মুরাদের লোকজন সাঈদ খোকনের লোকদের মঞ্চে উঠতে দেয়নি। এ নিয়েও হাতাহাতি হয়েছে। এরপর জেল হত্যা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের উপস্থিতিতে শাহে আলমের ওপর চড়াও হন সাঈদ খোকনের লোকেরা। এ সময় সাঈদ খোকনকে পুলিশি নিরাপত্তায় ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আবুল হাসনাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নেতৃত্ব যদি একক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত থাকে তাহলে এরচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করা যায় না।’