২০১৭
তারপরও ক্রিকেট সাফল্যে ভাস্বর ছিল বাংলাদেশ
ক্রিকেটবিশ্ব এক নতুন বাংলাদেশ দেখেছিল ২০১৫ সালে। সে বছর অসাধারণ কিছু সাফল্য দিয়ে সারা দুনিয়াকে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছিল লাল-সবুজের দল। সে ধারাবাহিকতা ছিল ২০১৬ সালেও। ২০১৭ সাল এখন শেষ হওয়ার পথে। ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে হিসেবে কষার পালা শুরু হয়ে গেছে। এ বছর বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি সিরিজ ও টুর্নামেন্ট খেলেছিল। তবে শেষ দিকের কিছু ব্যর্থতা বাদ দিলে অর্জনটাই বেশি মাশরাফি-সাকিবদের।
টেস্ট সফল্যের কথাই ধরা যাক, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ নয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে দুটি টেস্ট জিতেছে, হেরেছে সাতটি ম্যাচ। অঙ্কের হিসাবে এই সাফল্য কমই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য দুটি টেস্ট জয় ছিল অনেক বড় সাফল্য। বিশেষ করে গত মার্চে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপেক্ষ ঐতিহাসিক শততম টেস্টে চার উইকেটে জয় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বিশাল অর্জন।
এর পর আগস্টে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয় আরেকটি ইতিহাস রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। দুর্দান্ত প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০ রানে হারিয়ে ছিল মুশফিক বাহিনী, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল দারুণ একটি মাইলফলক। টেস্টে বাংলাদেশের এ দুটি সাফল্য অন্যসব ব্যর্থতাকে একেবারেই ঢেকে দিয়েছে।
তবে সাফল্য না হলেও টেস্টে বাংলাদেশের আরেকটি অর্জন ছিল। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর কোনো সিরিজ খেলতে ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতে হায়দরাবাদে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ২০৮ রানে হেরেছিল।
ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ঝুলিতে ছিল দারুণ কিছু অর্জন। বছরের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শুরু করেছিল জয় দিয়ে। এ বছর মার্চে ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানে হারিয়েছিল মাশরাফিরা। সে ধারাবাহিকতা বছরজুড়ে না থাকলেও ১৪টি ওয়ানডে খেলে চারটিতে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল।
তবে এ বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল, কয়েকটি পরাশক্তি দলকে টপকে মে-জুনে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠে লাল-সবুজের দল। এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সাফল্য বললে ভুল বলা হবে না।
তার আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিল আট উইকেটে এবং সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে জেতে মাশরাফির দল। এই সফল্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বেশ কাজে আসে।
তবে বছরের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে একেবারেই নাকাল ছিল বাংলাদেশ দল। তিনটি ম্যাচ খেলে তিনটিতেই হেরেছিল, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুনতে হয় ক্রিকেটারদের।
টি-টোয়েন্টিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচ খেলে। এর মধ্যে ছটিতেই হেরেছিল, আর জয় পায় মাত্র একটি ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত এপ্রিলে সে ম্যাচে ছয় উইকেটে জিতেছিল মাশরাফির দল। এই সিরিজের পরই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যান অধিনায়ক মাশরাফি।
মাশরাফির অবসর এ বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম আলোচিত ঘটনা। তবে কী কারণে হঠাৎ তিনি অবসরে যান, সেটা জানা যায়নি। এর পর এই নভেম্বরে দলের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি এখন শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ।
বছরের শেষ দিকে এসে এই ডিসেম্বরে অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল মুশফিকুর রহিমকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। তাঁর জায়গায় আবার অধিনায়ক হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। আর তামিম ইকবালকে সরিয়ে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাহমুদউল্লাহকে।