‘অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো উপায় থাকে না’
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনে বৈধ পন্থায় শক্তি প্রয়োগ করা অনস্বীকার্য বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তবে এমনভাবে শক্তি প্রয়োগ করা উচিত নয়, যাতে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে বলেও মনে করেন তিনি।
আজ শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন মিজানুর রহমান। সারা দেশে নাশকতা, পেট্রলবোমা নিক্ষেপসহ চলমান সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শান্তি পদযাত্রার আয়োজন করে কমিশন। সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রাটি।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, কঠোরতম যা কিছু প্রয়োজন তা ব্যবহার করে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হয়তো বৈধ পন্থায় শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা একটি সাবধান বাণী উচ্চারণ করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আপনারা যখনই শক্তি প্রয়োগ করবেন, আপনারা যেন কখনো এমনভাবে শক্তি প্রয়োগ না করেন, যেটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য হয়ে যেতে পারে। আমরা মনে করি, সব সময়ে বৈধভাবে শুধু সমানুপাতিক হারে আপনি শক্তি প্রয়োগ করবেন, যেটিকে আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য বা বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।’
দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশের মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, তাদের অগ্নিদগ্ধ করে, পেট্রলবোমা মেরে কোনো সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে মানবাধিকার বা গণতান্ত্রিক কোনো মূল্যবোধ অর্জন করা সম্ভব নয়। আমরা বারবার বলেছি, যেকোনো অশুভ পন্থার মাধ্যমে শুভ কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। শুভ কোনো কিছু অর্জন করতে হলে শুভবুদ্ধির মাধ্যমে শুভ পন্থা ও শুভ কৌশলের মাধ্যমেই তা অর্জন করতে হবে। কিন্তু আজকে আমরা যা দেখছি এই উন্মত্ততা, এই উন্মাদনা, এই অমানবিকতা, এই পাশবিকতা এটি এখনই বন্ধ হতে হবে। এবং যারা এসব উসকে দিয়েছেন এবং ডাক দিয়েছেন, তাদেরই সব দায়দায়িত্ব গ্রহণ করে এসব বন্ধের জন্য নির্দেশ দিতে হবে। এটি আপনাদের কাছে আমাদের মিনতি এবং প্রার্থনা। একই সঙ্গে আমি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন তাদের উদ্দেশে বলতে চাই—আপনারা যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেই পাশবিকতার বিরুদ্ধে শুধু শক্তি প্রয়োগ করলেই হবে না। আপনাদের কাছেই আমি অনুরোধ করছি, আপনারাই বলুন এই পাশবিকতা, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে, সেই যুদ্ধ নিবৃত্ত করতে হলে কী পথ এবং কৌশল অবলম্বন করা উচিত? এটা আপনারা বলে দিন। আমরা মনে করি, যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রের অন্য কোনো উপায় থাকে না শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই অপশক্তিকে রুখার জন্য।’
পরিস্থিতি ৭ বা ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে—রাষ্ট্রের কাছে এমন কথার ফুলঝুরি আর শুনতে চান না মন্তব্য করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই যে আপনারা কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং জনজীবনে শান্তি ফিরে আসছে। সেটি আমরা উপলব্ধি করতে চাই প্রতিমুহূর্তে আমাদের জীবনযাত্রার মাধ্যমে।’ এ সময় তিনি সব রাজনীতিবিদের প্রতি হাতজোড় করে অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন বিবেকের তাড়নায় হলেও এই সহিংস পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কাজী রিয়াজুল হক ও মাহফুজা খানম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুসহ অন্যরা।