খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে বাড়তি পুলিশ, গ্রেপ্তার ৭
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় ঘিরে বাড়তি পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সেখান থেকে বিএনপির সাত নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের নেত্রী।
শনিবার বিকেল ৫টার পর অতিরিক্ত দুটি পিকআপ গাড়ি এবং তিনটি মাইক্রোবাসে করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আরো ৪০ জন পুলিশ সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে আসে। এ ছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি গাড়িও সেখানে এসে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের গেইটে পুলিশের পুরুষ ও নারী সদস্যরা সড়ক আটকে দুই পাশে অবস্থান নিয়েছেন। পেছনের গেইটেও একইভাবে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যা সন্ধ্যার আগে ছিল না।
বিকেল ৫টার আগে তাসলিমা বেগম ও সুলতানা খাদিজার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের কয়েকজন নারী নেত্রী ওই কার্যালয়ের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে ‘সংযোগ বিচ্ছিন্ন’ করার প্রতিবাদ জানান। তাঁরা আটক বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান। এর এক ঘণ্টা পর পুলিশ ছয় নারী নেত্রীকে আটক করে।
সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে একটি পিকআপ গাড়িতে পাঁচটি বড় ড্রাম ও দুটি ড্রামে করে পানি নিতে দেখা গেছে। পিকআপ গাড়ির চালক আসাদ সাংবাদিকদের জানান, এসব পানি কারওয়ান বাজার থেকে আনা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিটে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তবে তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা মহানগরের ২৬ জন নারী নেত্রী এবং প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর নেতৃত্বে পাঁচ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
রাত সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছু নেতা-কর্মীকে আটকের সম্ভাবনা রয়েছে।
ছয়জনকে আটক করার পর তাঁদের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু সময় পর সেই গাড়িটি আবার ফিরে এসে মূল গেইটের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আটক হন বিএনপিনেত্রী খালেদা ইয়াসমীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভিতরে প্রায় ৩০ জন নারীনেত্রী অবস্থান করছেন। এ ছাড়া ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভিতরে রয়েছেন। এদের মধ্যে নারীনেত্রীরা একবার বের হওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু সামনে ও পেছনের গেইটে প্রচুর পুলিশের অবস্থান দেখে তাঁরা আবার ভেতরে চলে যান।
রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) বর্তমান সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তার আগে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ওই কার্যালয়ে থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে তিনি একে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ উল্লেখ করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে পুলিশ ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) লোক এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। গুলশান থানার নির্দেশেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে ডেসকো থেকে দাবি করা হলেও গুলশান থানার পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এরপর সকাল ৮টার দিকে কেব্ল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানকারীরা কোনো ধরনের স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন না।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের এক সমাবেশে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান অবরুদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়াকে না খেয়ে মরতে হবে বলে হুমকি দেন। একই সঙ্গে তাঁর বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার হরতাল-অবরোধে কোনো এসএসসি পরীক্ষার্থ পেট্রলবোমা হামলার শিকার হলে খালেদা জিয়ার কার্যালয় পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।