অবহেলার অধ্যায়ের অবসান
‘মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের কাদম্বিনীর মতো ঢাকা মেডিকেলে জন্ম নেওয়া নবজাতকও চিরবিদায় নিয়ে প্রমাণ করল সে আগে মরেনি। আজ রোববার সকালে তার এই মৃত্যুর মাধ্যমে অবহেলার এক অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। ঢাকা মেডিকেল কলে হাসপাতালে মৃত্যুর সনদ দেওয়ার পর দাফনের সময় জেগে ওঠা সেই শিশুটি মারা গেছে।
দুপুর ২টায় শিশুটিকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করেছে তার পরিবার। কয়েকজন চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে নবজাতকের বাবা জাহাঙ্গীর আলম এনটিভিকে জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে কোনো এক সময় তাঁর সন্তান মারা গেছে। কিন্তু রোববার সকাল ১১টায় পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেডিকেলের উপপরিচালক মুশফিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আজ সকাল ১১টায় চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন। অপরিপক্ক শিশুটি নানা সমস্যায় ভুগছিল।
গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর কবর দেওয়ার সময় এই নবজাতক জেগে উঠে। পরে তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাতেও যখন কোনো কাজ হচ্ছিল না তখন চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কম ওজনের এই শিশুটি ২৮ সপ্তাহের আগেই জন্ম নিয়েছিল। তার শরীরের অভ্যন্তরের অনেক অঙ্গই ঠিক মতো বেড়ে ওঠেনি। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ছিল না। সাধারণত নবজাতকদের ওজন হয় ৩ কেজি। কিন্তু তার ওজন ছিল মাত্র এক কেজি ২০০ গ্রাম।
শিশুটির মায়ের নাম সুলতানা আক্তার। ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় থাকেন। প্রসব বেদনা উঠলে গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার রাত ১২টার পর একটি সন্তানের জন্ম দেন। প্রাথমিক অবস্থায় শিশুটিকে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
কিন্তু শনিবার সকালে শিশুটি নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসকরা তখন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একজন সহকারী রেজিস্ট্রার মৃত্যুর সনদও দেন। আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়ার সময় শিশুটি নড়ে ওঠে। পরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে আবার শিশুটিকে ভর্তি করেন চিকিৎসকরা।