দীপিকার পরশপাথর ছবিগুলো
বড়পর্দায় তাঁর মিষ্টি হাসি থেকে চোখ সরানো দায়। দীপিকার হাসিতে কার না মাথায় চক্কর দেয় বলুন! শুধু তাই নয়, বলিউড আবেদনময়ীর নায়িকাদের মধ্যে এখন তিনি শীর্ষে। দীপিকা পাড়ুকোন কেবল রূপের রানি নন, বক্স অফিসের সম্রাজ্ঞীও বটে। ফ্যাশন মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে আজ বলিউডে তাঁর সাফল্যের পেছনে বিশাল অবদান রেখেছে কিছু ছবি। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, দীপিকার জয়জয়কারের রূপকার এই ছবিগুলোই! তো চলুন জেনে নিই সেই সব ছবি সম্পর্কে যা দীপিকার জীবনে কাজ করেছে পরশপাথরের মতো।
১. ওম শান্তি ওম
বলিউডে দীপিকার শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। প্রথম ছবিতে বলিউড বাদশা শাহরুখের বিপরীতে অভিনয়। ভাবা যায়! একই ফ্রেমে শাহরুখের সাথে সমানতালে অভিনয় করে যাওয়া মোটেও ছেলেখেলা নয়। কিন্তু দীপিকার মধ্যে নবাগতদের ন্যূনতম জড়তা বা এলোমেলো ভাবও কাজ করেনি। ‘ওম শান্তি ওম’ ছবিতে কি ‘শান্তি’ কি ‘স্যান্ডি’—দুই ভূমিকাতেই সাবলীল ছিলেন দীপিকা। শ্রেষ্ঠ নবাগতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও পেয়ে যান প্রত্যাশিতভাবে। বক্স অফিসের বোদ্ধারাও দ্রুত নড়েচড়ে বসেন তখন। প্রথম দেখাতেই বোঝা গিয়েছিল, বেঙ্গালুরু থেকে উঠে আসা একহারা গড়নের এই মেয়েটি বলিউডে লম্বা রেসের ঘোড়া!
২. লাভ আজকাল
দুর্দান্ত অভিষেকের পর কিন্তু এক দৌড়ে শীর্ষে উঠে আসেননি দীপিকা। ‘বাঁচনা অ্যায় হাসিনো’ আর ‘চাঁদনি চক টু চায়না’ বক্স অফিসে সুবিধে করতে না পারায় অনেকটা ছিটকে পড়েছিলেন কক্ষপথ থেকে। এমন অবস্থায় তাঁর ক্যারিয়ারে ‘ব্রেক-থ্রু’ এনে দেয় ইমতিয়াজ আলীর ‘লাভ আজকাল’। ২০০৯ সালের এই ছবিতে দীপিকা অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে আবারো তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। ইমতিয়াজের সাফল্যের সাথে সাথে দীপিকাও আবার ফিরে আসেন ভালো অবস্থানে।
৩. ককটেল
‘লাভ আজকাল’ ছবির সাফল্যের পর কেউ ভাবতেও পারেননি যে সাফল্যের পেছনে দীপিকার ছুটে চলা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই তাই হয়েছিল। ‘কার্তিক কলিং কার্তিক’, ‘লাফাঙ্গে পারিন্দে’, ‘ব্রেক কে বাদ’, ‘খেলে হাম জি জান সে’, ‘অরক্ষণ’, ‘দেশি বয়েজ’- বক্স অফিসে ব্যর্থতার তালিকা দিনের পর দিন কেবলই লম্বা হয়ে চলছিল। অবশেষে ২০১২ সালে হোমি আদাজানিয়ার রোমান্টিক কমেডি ‘ককটেল’ ইতি টানল এই ব্যর্থতার। ‘ভেরোনিকা’ চরিত্রে উচ্ছল, মুক্ত পাখির মতো দীপিকার অভিনয় তাঁর হোঁচট খাওয়া ক্যারিয়ারকে অনায়াসে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। একই সাথে আবেদনময়ী হিসেবেও ভক্তদের কাছে আরাধ্য হয়ে ওঠেন তিনি। সত্যি বলতে, ‘ককটেল’ দিয়ে পেশাদারি চলচ্চিত্র জীবনে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসেন দীপিকা।
৪. ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি
পেশাদারিত্বের সেরা পরিচয় দিয়ে এই ছবিতে বাজিমাত করেছিলেন দীপিকা। সাবেক প্রেমিক রণবীর কাপুরের সাথে অভিনীত এই ছবিটি দীপিকার ক্যারিয়ারে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। চশমা চোখের মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া ছাত্রী থেকে জীবনকে উপভোগ করতে শেখা এক স্বাধীন নারীর গল্পকথনে ‘ন্যয়না’ চরিত্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান এই গ্ল্যামার গার্ল। পর্দায় রণবীর-দীপিকা জুটির অসামান্য রসায়ন দর্শকেরও মন জিতে নেয় অনায়াসে। বলিউডে দীপিকার আসন এবার একেবারে মজবুত হয়ে যায়।
৫. চেন্নাই এক্সপ্রেস
শাহরুখ-দীপিকা জুটির ছবি কি হিট না হয়ে যায়! ‘ওম শান্তি ওম’ এরপর এই জুটির দ্বিতীয় ছবি ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ বলিউডের সর্বকালের ব্যবসাসফল পাঁচ ছবির একটি। এক সাধারণ দক্ষিণী তরুণীর ভূমিকায় দীপিকার সাবলীল, অনবদ্য অভিনয় দর্শক ও সমালোচক; সবারই প্রশংসা পেয়েছে। রোহিত শেঠির এই অ্যাকশন কমেডি ছবিটি বলিউড বক্স অফিসে ২০৮ কোটি রুপি আয় করেছিল, আর আন্তর্জাতিক বক্স মিলিয়ে মোটমাট প্রায় ৪০০ কোটি রুপি! এই ছবিটি দীপিকাকে বলিউডে নতুন রানির আসনে বসিয়ে দেয়।
৬. গ্যলিয়োঁ কী রাসলীলা রামলীলা
সঞ্জয় লীলা বনসালির মতো পরিচালকের সাথে কাজ করতে পারা বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দীপিকা তাঁর অভিনয় পারদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছেন আগেই। সঞ্জয় লীলার ছবিতে নির্বাচিত হওয়াটা দীপিকার জন্য ছিল অভিনয় প্রতিভা দেখানোর পুরস্কার। ভারতীয় প্রথাগত নারীর চরিত্রায়নে দীপিকা কখনই কম যান না। এই ছবিতে দারুণ অভিনয় দিয়ে সে বিষয়টা আবারও দেখিয়ে দেন তিনি।
এখন ভবিষ্যতে কোন ছবি আবারো পরশপাথর হয়ে উঠবে দীপিকার জন্য, যোগ করবে নতুন পালক তাঁর মুকুটে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।