‘মওদুদ আহমদকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশের খবর মিথ্যা’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনি লড়াই থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশের খবর মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে আইনজীবীরা এ দাবি করেন।
আজ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রধান শিরোনাম হিসেবে আসা খবরে দাবি করা হয়েছে, আইনজীবী প্যানেল থেকে মওদুদ আহমদকে সরে যেতে বলেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত’ দিয়ে এই খবর প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, রোববার খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ছয় আইনজীবী দেখা করতে গেলে তিনি তাঁদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ একজন সিনিয়র আইনজীবী। তাঁর অনেক সুনাম আছে। অথচ বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করতে এ ধরনের নিউজ করা হচ্ছে।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মওদুদ আহমদকে নিয়ে আজ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। সেদিন আমরা ছয়জন আইনজীবী বেগম জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে সবাই (জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়া) আজ উপস্থিত আছি।’
ওই বৈঠকের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘বেগম জিয়াকে আমরা কো-অর্ডিনেট করছি। আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নির্বাচিত (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে) হয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেদিন মওদুদ আহমদ অন্য একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। তাই দেখা করতে যেতে পারেননি।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাদের অভিনন্দন জানান। আমরা যেভাবে তাঁর মামলা চালাচ্ছি সেভাবে মামলা চালিয়ে যেতে তিনি আমাদের পরামর্শ দেন।’
বিএনপির প্রধানের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ না করলে তিনি মুক্তি পাবেন। আমরাও তাই মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই ধরনের নিউজ করলে পত্রিকার ওপর মানুষের আস্থা থাকবে? এটা কি ওই সাংবাদিককে খালেদা জিয়া বলেছেন, মওদুদকে সরে যেতে?’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘ওই নিউজে আমারও মন্তব্য রয়েছে। কিন্তু সেখানে এ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ এই পত্রিকা রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং এ ধরনের নিউজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম এই ধরনের কোনো কথা আমাদের বলেননি। তাই এই নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু দুঃখ প্রকাশ নয়, তীব্র প্রতিবাদও জানাচ্ছি।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মওদুদ আহমদ একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তাঁর কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, শিখছি। এমন একজন আইনজীবীকে খালেদা জিয়া কীভাবে সরে যেতে বলতে পারেন?’
সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলায় সামগ্রিকভাবে যারা আছি তাঁরাই এ মামলা পরিচালনা করব।’
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন,‘সরকার ভেবেছিল বেগম জিয়াকে তাঁরা জেলে নেবে, তারপর নেতা-কর্মীরা এর প্রতিবাদে জ্বালাও-পোড়াও করবে এবং তাঁরা এই অভিযোগে তাদের (বিএনপির নেতা-কর্মীদের) জেলে ভরবে। কিন্তু তা হয়নি। এ জন্য সরকার খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের নিউজ করিয়েছে।’
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সেদিন যাঁরা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সেদিন যাঁরা সেখানে ছিলেন আজ এই সংবাদ সম্মেলনেও তাঁরা উপস্থিত আছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই সিনিয়র আইনজীবী। জুনিয়রদের মধ্যে সেদিন শুধু আমি ছিলাম। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, তিনি (খালেদা জিয়া) এ কথা বলেননি।’
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি তথ্য দিয়ে এসব নিউজ করিয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রে আমরা আইনজীবীরা একত্রিত থাকব। এ ক্ষেত্রে কোনো আপস চলবে না।’
এর আগে সকালে মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি একজন সিভিল প্র্যাকটিশনার (দেওয়ানি মামলার আইনজীবী)। বেগম জিয়ার মামলাটি ক্রিমিনাল মামলা (ফৌজদারি)। এ ধরনের মামলায় আমি আগেও প্র্যাকটিস করিনি, এখনো করি না।’