ক্ষেতের পেঁয়াজ ক্ষেতেই পড়ে আছে
মেহেরপুরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। টানা অবরোধ-হরতালের কারণে বাইরের ক্রেতারা আসতে পারছেন না। আর সহিংসতার ভয়ে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে কোথাও সরবরাহ করারও সাহস পাচ্ছেন না। ফলে ক্ষেতের পেঁয়াজ ক্ষেতেই পড়ে আছে।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় প্রতি বছর সুখসাগর ও তাহিরপুরি জাতের পেঁয়াজের চাষ হয়। চলতি মৌসুমে প্রায় এক হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলনের উপযুক্ত সময় পার হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। জেলার বিভিন্ন মাঠে উৎপাদিত এসব পেঁয়াজের বড় একটি অংশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। দীর্ঘ দিন এ অবস্থা চলতে থাকলে জমিতেই নষ্ট হবে ফসল। এ ছাড়া জমিতে বেশি দিন পেঁয়াজ রাখলে খরচের পাশাপাশি ফলনও কমে যাবে। ধার-দেনা করে পেঁয়াজ চাষ করে এখন তাঁরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, পেঁয়াজ মৌসুমের এ সময়ে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু অবরোধের কারণে এখনো ব্যবসা শুরু করতে পারেননি তাঁরা। পরিবহনের জন্য যানবাহনই পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
সদর উপজেলার মনাখালী গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম এনটিভিকে বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে গাড়িতে পেট্রলবোমা মারায় তাঁরা পেঁয়াজ পরিবহন করতে পারছেন না। এ জন্য খুব সমস্যায় আছেন।
একই গ্রামের কৃষক খসরু আলম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এখনো কোনো পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেননি তিনি। বললেন, লাভ তো দূরের কথা কিভাবে ঋণের টাকা শোধ করবেন সেই চিন্তায় আছেন।
মেহেরপুর তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, ‘গত বছর এ সময় আমরা ১০-১৫ গাড়ি লোড দিয়েছি। এ বছর এই সময়ে একটি-দুটি গাড়িও লোড করতে পারছি না। গত বছর যে গাড়িগুলোর ভাড়া ছিল ১৫-২০ হাজার টাকা, এ বছর তা ৩৫-৪০ হাজার টাকা পড়ছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক চৈতন্য কুমার দাস বলেন, ‘সুখসাগর পেঁয়াজ দীর্ঘদিন জমিতে ধরে রাখা যায় না। সঠিক সময়ে পেঁয়াজ উত্তোলন করতে না পারলে জমিতেই নষ্ট হবে।’
জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘পরিবহনে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য আমাদের সার্বিক তত্ত্বাবধান অব্যাহত রয়েছে।’