ভালো নেই মুক্তামনি, শঙ্কায় পরিবার
রক্তনালিতে টিউমার আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনি ভালো নেই। হাতের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণায় নির্জীব হয়ে পড়ছে সে। টানা ছয় মাসের উন্নত চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মুক্তামনির ক্ষতস্থানে ফের পচন ধরেছে। রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ডান হাতের ক্ষত স্থানের পচা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে ছোট-ছোট পোকা।
এখন মুক্তামনি দাঁড়াতে পারে না। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মুক্তার মা আসমা খাতুন গতকাল সোমবার এনটিভি অনলাইনকে জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁরা বলেছেন, ঈদের পর ঢাকায় নিয়ে যেতে।
২৪ ঘণ্টা শয্যাশায়ী মুক্তামনি জানায়, তাঁর দেহে কোনো শক্তি নেই। এখন তীব্র জ্বালা হয়। ক্ষত স্থান থেকে রক্ত ঝরে। পোকা বের হয়। বিকট দুর্গন্ধে কেউ কাছে থাকতে পারে না।
মুক্তামনি জানায়, একমাত্র আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
মুক্তামনির পরিবার জানায়, জন্মের দেড় বছর পর মুক্তামনির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত হাতটি গাছের গুড়ির আকার ধারণ করে প্রচণ্ড ভারি হয়ে ওঠে। এক সময় এতে পচন ধরে, পোকাও জন্মায়। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকত মুক্তামনি। বিকট দুর্গন্ধের কারণে আত্মীয়-স্বজন ও পড়শিদের যাতায়াতও একরকম বন্ধ হয়ে যায়।
মুক্তামনির বাবা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেন জানান, দেশের অনেক ডাক্তার ও হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো মুক্তার করুণ চিত্র তুলে ধরে। পরে সরকারি উদ্যোগে মুক্তামনিকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
চিকিৎসকরা বায়োপসি করে জানান, মুক্তামনির রক্তনালিতে টিউমার রয়েছে। পরে তাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ভিডিও কনফারেনসের মাধ্যমে দেখার পর সিঙ্গাপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুক্তার চিকিৎসায় তাদের অস্বীকৃতির কথা জানিয়ে দেয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি সরকারি খরচে মুক্তামনির চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালের ১০ জুলাই মুক্তামনিকে ভর্তি করার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম টানা ছয় মাস চিকিৎসা দেয়। এ সময় তার দেহে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসায় তার স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়।
ঢাকায় টানা ছয় মাস চিকিৎসা শেষে এক মাসের ছুটিতে মুক্তামনি ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরে আসে। এর পর থেকে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলতে থাকে।
এরই মধ্যে মক্তামনির অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে। সব ধরনের ওষুধ খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন একবার করে ড্রেসিং করতে হয়।