স্মৃতিতে শ্রদ্ধায় হুমায়ুন ফরিদী
অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী এবং মানুষ হুমায়ুন ফরিদীকে কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর সহকর্মীরা। নিজের পুরো জীবনটাই কাটিয়েছেন অভিনয়কে সঙ্গী করে। নিজের প্রতিভা দিয়ে মঞ্চ থেকে সিনেমার পর্দা- ফরিদী সব দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন খুব সহজেই। পেয়েছেন সহকর্মী, অগ্রজ ও অনুজদের ভালোবাসা, স্নেহ ও শ্রদ্ধা।
আতাউর রহমান
অভিনেতা
হুমায়ুন ফরিদী অনেক মেধাবী অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু অনেক আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। ফরিদী আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট ছিলেন। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেছেন তিনি। আমি তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। ফরিদী অভিনীত ‘কেরামত মঙ্গল’ চরিত্রটি আমার খুব পছন্দের। তবে আমি মনে করি ফরিদীর জন্য মঞ্চ এবং টেলিভিশনটাই ঠিক ছিল। ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি ভুল পথে চলে গিয়েছিলেন।
কাজী হায়াৎ
পরিচালক
একা একা যখন সময় কাটাই প্রায়ই ফরিদীর কথা মনে করে হাসি। এত ভালো কৌতুক বলতো, সব সময়ই মাতিয়ে রাখত। আমি সব সময় ভাবতাম মানুষের এত কৌতুক মনে থাকে কীভাবে! একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন ফরিদীর উত্তর ছিল, আরে জীবনটাই তো একটা কৌতুক। আমরা সবাই চলে যাব, এই কৌতুকগুলোই থাকবে।
অভিনেতা হিসেবে সে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছিল বাংলা চলচ্চিত্রে। আমরা ছবির গল্প নিয়ে যখন বসি তখনই চরিত্র ঠিক করে গল্প গুছানো হয়। কাকে দিয়ে চরিত্রটা করানো হবে, সে কত শক্তিশালী অভিনেতা তার ওপর নির্ভর করে গল্প এগুত। এখন এই মুহূর্তে এ রকম একজনও নেই যে ফরিদীর অভাব পূরণ করতে পারে। এমন শক্তিশালী অভিনেতার অভাবে আমাদের ছবির গল্প শক্ত হচ্ছে না। মনের মতো গল্প নিয়ে কাজ করার উপযুক্ত শিল্পীর যে অভাব সেটা প্রতিনিয়ত অনুভব করি।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন একজন কৌতুক অভিনেতা ছিলেন খান জয়নুল। ছবি দেখার আগে দেখতাম উনি অভিনয় করেছেন কি না! হুমায়ুন ফরিদীও সেভাবে দর্শক টানতে পেরেছিলেন। শুধু তাঁকে দেখার জন্যই দর্শকরা হলে যেত। আমি এমন অনেক মানুযকে চিনি যারা ফরিদী মারা যাওয়ার পর আর হলমুখী হননি। ফরিদী আমার অনেক ভালো বন্ধু ছিল, দেশ ভালো একজন অভিনেতা হারিয়েছে, আমি হারিয়েছি একজন ভালো বন্ধু।
রাইসুল ইসলাম আসাদ
অভিনেতা
হুমায়ুন ফরিদী ছিল আমাদের আইকন। অভিনয়কে কীভাবে জীবন্ত করে উপস্থাপন করতে হয় তা জানত সে। তার এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া ঠিক হয়নি, আরো অনেক কিছু পাওয়ার ছিল তার কাছ থেকে। নতুন যারা কাজ করছে তাদের বলব, ড্রেসআপ-গেটাআপে কীভাবে নিজেকে চরিত্রের মতো করে তৈরি করে নিতে হয় তা হুমায়ুন ফরিদীকে দেখলে বোঝা যায়। নাটক, সিনেমা প্রত্যেক ক্ষেত্রে সে ছিল সফলতার শীর্ষে। নায়ক, ভিলেন বা কমেডি যে চরিত্রই করুক না কেন সেটাকে অভিনয় মনে হয়নি, এতটাই সাবলীল ছিল তার পর্দায় উপস্থিতি। বাস্তব জীবনেও সাবলীল ছিল সে। বাস্তবতার সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারত। মানুষের মাঝে ভালো খারাপ সবই থাকে। ফরিদীর মাঝে অনেক ভালো গুণ ছিল যা অনুকরণীয়।
ওমর সানি
অভিনেতা
কিছু মানুষের জন্মই হয় শিল্পী হওয়ার জন্য। ঠিক সে রকম একজন মানুষ ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। তিনি শিল্পী হয়েই জন্মেছিলেন। আমি মনে করি হুমায়ুন ফরিদী অভিনয়ের শিক্ষক ছিলেন। একটা সাধারণ জিনিস কীভাবে অসাধারণ করে তুলতে হয় সেটা তিনি জানতেন। বুঝতে পারতেন। তিনি আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছেন এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নিজের প্রতি তাঁর অনেক অভিমান ছিল। যখন কিছু খেতেন অভিমান করেই খেতেন। আল্লাহ্পাক তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।
আব্দুন নূর সজল
অভিনেতা
আমার প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। টিভিতে আমার কোনো নাটক প্রচারিত হলে হুমায়ুন মামা দেখতেন। যখন আমার নাটক প্রচারিত হতো তখন আমি বেশ ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এর কারণ একটাই হুমায়ুন মামা প্রায়ই আমার নাটক দেখে সমালোচনা করতেন। আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা সেদিনই যেদিন হুমায়ুন মামা আমাকে বলেছিলেন- ‘সজল তুই আমার প্রিয় অভিনেতা’। আমি হুমায়ুন মামাকে খুব মিস করি।