নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক হয় না
ভারতের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সুসম্পর্ক হয় না।
আজ শনিবার রাজধানীর পূর্বানী হোটেলে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি আয়োজিত ইফতারে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শান্তিনিকেতনে গেছেন। আমাদের অনেকেরই প্রিয় জায়গা সেটি। সেখানে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেছেন, ভালো কথা। কিন্তু আমাদের অধিকারের কথা বলা যাবে না কেন? পত্রিকায় দেখলাম প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সমস্যার কথা বলে আজকের এই সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চান না। কেন এটা হবে? নিজেদের অধিকারের কথা বললে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক কেন নষ্ট হবে? এ সম্পর্কের জন্য কি আমরা পানি সমস্যা ভুলে যাব?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১০ বছর ধরে তিস্তা পানির সুরাহা হওয়ার কথা শুনছি। পানির অভাবে অনেকের জীবন-জীবিকা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সুরাহা হয়নি। আমরা অত্যন্ত সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু পারস্পরিক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। নিজেদের অধিকার জলাঞ্জলি দিয়ে সুসম্পর্ক জনগণ মেনে নেবে না।
সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে এখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে সরকার। সরকারি হিসাব মতো ৫০ জনের অধিক হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই মাদক নির্মূল হোক। কিন্তু মানুষ হত্যা করে মাদক দমন করা যায় না। এর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণই মাদক নির্মূল করবে।
ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, আগে আপনাদের ঘরকেই সামলান। মাদকের সম্রাট তো আপনাদের ঘরেই আছে। তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেননি এখনো। উল্টো বলছেন, তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হয়নি! অথচ সারা দেশ জানে একজন এমপি মাদকের সম্রাট।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ সময় হয়তো কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্টে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া একাকি ইফতার করছেন। এটি আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত করে। এ সময় ইফতার মাহফিলে মন থেকে আসার ইচ্ছা হয় না। তবু রাজনীতির কারণে আসতে হয়। মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হয়েছে। সাধারণত এসব মামলায় সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পেয়ে যায়। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে খালেদা জিয়াকে এ সরকার মুক্তি দিচ্ছে না। নানা কৌশলে তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য চেষ্টা করছে সরকার। আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করেছে তারা।
ফখরুল বলেন, অত্যন্ত সুকৌশলে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে সরকার। ভিন্ন মত সহ্য করছে না। তারা বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে ভিন্ন মতকে দমন করছে। রাজনীতিক নেতাকর্মীদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭১ এর চেতনা ধ্বংস করে দিয়ে একটি দুঃসহ রাষ্ট্র তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এই অবস্থায় ১৯৭১ সালে সমগ্র জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো ঠিক একইভাবে আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের অধিকারের প্রশ্নে সবাইকে এক হতে হবে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। আমরা সব সময় দাবি করে এসেছি যে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের কোনো নজর নেই।
ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাপরিষদের সদস্য তৈমূর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলু প্রমুখ।
এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
উপস্থিত ছিলেন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পারোয়ার, নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিঙ্কন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক ও মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এলডিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, মুসলিম লীগের সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান ও মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বিজেপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ, লেবার পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অপর অংশের মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি, এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ গোলাম আজগর, ন্যাপ-ভাসানীর সভাপতি আজহারুল ইসলাম, পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।