অ্যাডিলেডে ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধ’
খেলাধুলার জনপ্রিয় চ্যানেল স্টার স্পোর্টসে কয়েকদিন ধরে একটা বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে। বজ্রকণ্ঠে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন বলিউড-সম্রাট অমিতাভ বচ্চন! বিজ্ঞাপনের শেষ পর্যায়ে তাঁর নামের পাশে লেখা ‘দ্য ভয়েস অব ইন্ডিয়া’। চলচ্চিত্র আর টিভির পর্দা কাঁপিয়ে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে নেওয়া ‘বিগ-বি’র হাতে হঠাৎ ভাষ্যকারের মাইক্রোফোন কেন? কারণ আর কিছুই নয়, রোববারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এ এমনই এক ম্যাচ যা দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীময়। বিশ্বের যে প্রান্তেই ভারত বা পাকিস্তানের মানুষ থাকুক, এই ম্যাচের দিকে তারা চোখ রাখবেই। আর বিশ্বকাপ হলে তো কথাই নেই।
একাদশ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনেই ভারত-পাকিস্তান লড়াই! ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এর চেয়ে খুশির কথা আর কী হতে পারে! বিশ্বকাপের গ্রুপ নির্ধারণের পর যখন দেখা গেল ভারত-পাকিস্তান একই গ্রুপে, তখন থেকেই ১৫ ফেব্রুয়ারির জন্য ক্রিকেট-ভক্তদের প্রতীক্ষা শুরু। ম্যাচটাকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ বোঝাতে একটি তথ্য দেওয়াই যথেষ্ট। ম্যাচটির টিকিট ছাড়ার ২০ মিনিটের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে গেছে। রোববার অ্যাডিলেড ওভালে যে তিলধারণের জায়গা থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য!
একটা বিষয়ে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াই অনন্য। ক্রিকেটের সেরা আসরে ষষ্ঠবারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিস্ময়করভাবে আগের পাঁচবারই বিজয়ী দলের নাম ভারত। ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে পাকিস্তান। পাকিস্তানের ৭২ জয়ের বিপরীতে ভারত জিতেছে ৫০ বার। কিন্তু বিশ্বকাপের ‘হাই-ভোল্টেজ’ ম্যাচে পাকিস্তানিরা কেন চরম ব্যর্থ, তা গবেষণার বিষয় হতে পারে।
মহেন্দ্র সিং ধোনি অবশ্য দেশের এমন ‘সমৃদ্ধ’ ইতিহাসের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। ভারত অধিনায়ক পেছনের সাফল্যের দিকে নয়, তাকিয়ে আছেন রোববারের দিকে, ‘আমি পরিসংখ্যান নিয়ে মাথা ঘামাই না। কারণ অতীত এসব ম্যাচে কমই প্রভাব ফেলে। এই ম্যাচটা সবার জন্যই খুব মূল্যবান। ক্রিকেটভক্ত আর মিডিয়ার মধ্যে এই ম্যাচ নিয়ে তোলপাড় চলছে। তবে আমাদের জন্য একটা বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো আমরা ম্যাচটা কেমন খেলি।’
ধোনি তাঁর দলের পারফরম্যান্স নিয়ে এখন বেশ দুশ্চিন্তায়। গত নভেম্বরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রাখার পর ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে ভারত। টেস্ট সিরিজে ২-০-তে হার, ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে সবগুলো ম্যাচে হার, প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে নাকাল—একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছে ধোনির দল। ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক বিশেষ করে বোলারদের নিয়ে চিন্তিত। প্রথম ১০ ওভারে ভালো বল করার ওপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন ধোনি, ‘বাউন্ডারি না দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে প্রথম ১০ ওভারে। কারণ সে সময় বল নতুন থাকে বলে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা বলের গতি কাজে লাগাতে পারে। প্রথম ১০ ওভারে আমরা কেমন বল করতে পারি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ধোনি ইতিহাসের দিকে না তাকালে কী হবে, পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক কিন্তু ইতিহাস গড়তে বদ্ধপরিকর। আজ পর্যন্ত তাঁর কোনো পূর্বসূরি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের হাসি হাসতে পারেননি। এবার পাকিস্তানিদের সেই দুঃখ দূর করতে মিসবাহ মরিয়া, ‘ইতিহাস গড়ার এটা সুবর্ণ সুযোগ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সব সময়ই ভীষণ চাপ থাকে। তাই সবচেয়ে ভালো হবে যদি আমরা মাঠের পরিবেশ উপভোগ করে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলতে পারি। দলের সতীর্থদের প্রতি আমার পরামর্শ, ঠাণ্ডা মাথায় মাঠে নামো এবং নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলো। এ ধরনের ম্যাচে চাপ সামলানোর এটাই একমাত্র উপায়।’
শুরুতেই এমন একটা কঠিন ম্যাচে মাঠে নামতে হলেও তা নিয়ে চিন্তিত নন মিসবাহ। এ ব্যাপারে পাকিস্তান অধিনায়কের অভিমত, ‘কোনো টুর্নামেন্টে ভালো করতে চাইলে আপনাকে যে কোনো সময়, যে কোনো দলের বিপক্ষে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রথম ম্যাচেই ভারতের মুখোমুখি হওয়া কোনো ব্যাপার নয়। আমি শুধু মনে করি মাঠে নেমে মনোযোগের সঙ্গে নিজের খেলা খেলতে হবে।’
ভারত-পাকিস্তান এমনই এক ম্যাচ, খেলোয়াড় কেন, সাধারণ মানুষেরও মনোযোগ না দিয়ে উপায় নেই। এখন শুধু সেই রোমাঞ্চকর লড়াই শুরুর অপেক্ষা।