যে ম্যাচে টেন্ডুলকারকে মনে পড়বেই
১৯৯২ থেকে ২০১১। বিশ্বকাপের সর্বশেষ সাতটি আসরে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। প্রতিবারই হারের মুখ দেখতে হয়েছে পাকিস্তানকে। এবং প্রায় প্রতিবারই পাকিস্তানকে নাজেহাল করেছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনবারই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে লিটল মাস্টারের হাতে। বিশ্বকাপে এই প্রথম ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে তিনি নেই। তবে রোববার অ্যাডিলেডের ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচের আগে ঘুরে-ফিরে আসছেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।
ভারতীয়রা এখন বিভোর হয়ে আছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্নে। অন্যদিকে পাকিস্তানশিবিরে আশা জাগাচ্ছে টেন্ডুলকারের অনুপস্থিতি। এবার যে ‘সবচেয়ে বড় শত্রু’টির মুখোমুখি হতে হবে না মিসবাহ-আফ্রিদিদের!
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম মুখোমুখি লড়াইয়েই জ্বলে উঠেছিলেন টেন্ডুলকার। তখন তাঁর ১৯ বছরও পুরো হয়নি। অথচ ১৯৯২ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াই ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে খোদাই হয়ে আছে টেন্ডুলকারের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে। প্রথমে খেলেছিলেন ৬২ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের চমৎকার ইনিংস। পরে বল হাতেও নিয়েছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান করা আমির সোহেলকে। ভারতের ৪৩ রানের জয়ে বড় অবদান রাখায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন টেন্ডুলকার।
চার বছর পর, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ৯৩ রানের দারুণ এক ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছিল ওপেনিংয়ে টেন্ডুলকারের সঙ্গী নভজোত সিং সিধুর হাতে। সেই ম্যাচে টেন্ডুলকারের অবদান ৩১ রান। সিধু ও টেন্ডুলকারের উদ্বোধনী জুটি থেকে এসেছিল ৯০ রান। শেষ দিকে অজয় জাদেজার ঝড়ো ব্যাটিং এবং ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ও অনিল কুম্বলের ভালো বোলিং ৩৯ রানের জয় এনে দিয়েছিল ভারতকে।
তিন বছর পরের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন টেন্ডুলকার। ৬৫ বলে ৪৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ভারতের ৪৭ রানের জয়ের নায়ক অবশ্য ভেঙ্কটেশ প্রসাদ। মাত্র ২৭ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস ধসিয়ে দিয়েছিলেন এই ডানহাতি পেসার।
২০০৩ বিশ্বকাপ যেন নিজের করে নিয়েছিলেন টেন্ডুলকার। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শিরোপা জিততে না পারলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছিল তাঁর হাতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তো একেবারে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারদের নিয়ে গড়া পেস-আক্রমণকে নিয়ে ছেলেখেলা করে তাঁর ব্যাট উপহার দিয়েছিল ৭৫ বলে ৯৮ রানের এক অসাধারণ ইনিংস। ২৭৪ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৬ বল হাতে রেখে ছয় উইকেটের অনায়াস জয় তুলে নিয়েছিল ভারত। বলাই বাহুল্য, ম্যাচসেরা ছিলেন টেন্ডুলকার।
২০১১ বিশ্বকাপ আর হতাশ করেনি ক্রিকেট-ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যানকে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপের সব অপ্রাপ্তি ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া গিয়েছিল চিরচেনা টেন্ডুলকারকে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৫ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে এনে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের পুঁজি। ‘টিম ইন্ডিয়া’র ২৯ রানের জয়ে বড় অবদান রাখায় আবারও ম্যাচসেরা টেন্ডুলকার।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে ৭৮.২৫ গড়ে যাঁর রান ৩১৩, এবার তাঁর অভাব তো বোধ করবেই ধোনির দল!