ভারতের ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’
কয়েকদিন ধরে খেলাধুলার জনপ্রিয় চ্যানেল স্টার স্পোর্টসে একটা বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছিল। এক লোক পটকা হাতে সেই ১৯৯২ সাল থেকে টিভির সামনে বসে। বিশ্বকাপ এলেই ‘বিশেষ’ একটি ম্যাচে একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু হাতের পটকা হাতেই থেকে যায়, ফোটানো আর হয় না! কারণ একটাই, বিশ্বকাপে বারবার ভারতের কাছে পাকিস্তানের হার। এবারও সেই মানুষটিকে প্রতীক ধরা পাকিস্তানিদের পটকা ফোটানো হলো না। বিশ্বকাপে ষষ্ঠবারের মতো ভারতের কাছে পরাস্ত পাকিস্তান।
১৯৯২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপে পাঁচবার ভারতের কাছে হারের হতাশা-আক্ষেপ আরো বেশি চেপে ধরল পাকিস্তানকে। বিশ্বকাপ-মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের সঙ্গী হলো আরো একটা হার। এবারের হারটা একটু বেশিই লজ্জাজনক। ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্টে রানের ব্যবধানে ভারতের কাছে এটাই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হার। ৭৬ রানের জয়টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘টিম ইন্ডিয়া’র ষষ্ঠ সাফল্য। ভারত ভিন্ন ধরনের এক ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’ই করল যেন!
রোববার অ্যাডিলেড ওভালে ব্যাট হাতে জয়ের কাজ অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিল ভারত। বিরাট কোহলির ১০৭, সুরেশ রায়নার ৭৪ ও শিখর ধাওয়ানের ৭৩ রানের তিনটি চমৎকার ইনিংসে ভর করে তারা পাকিস্তানকে দিয়েছিল ৩০১ রানের দুরূহ টার্গেট।
জবাবে প্রায় একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন মিসবাহ-উল-হক। কিন্তু অধিনায়কের ৭৬ রানের দারুণ ইনিংস পাকিস্তানকে লক্ষ্যের ধারে-কাছেও নিয়ে যেতে পারেনি। সতীর্থদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি মিসবাহ। পাকিস্তানের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান ওপেনার আহমেদ শেহজাদের।
৩৫ রানে চার উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার মোহাম্মদ সামি।
চতুর্থ ওভারে অভিজ্ঞ ইউনিস খানের উইকেট হারানোয় পাকিস্তানের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলে স্বস্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন আহমেদ শেহজাদ ও হারিস সোহেল।
১৮তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ৩৬ রান করা সোহেলকে ফিরিয়ে। ২৪তম ওভারে পাকিস্তানকে জোড়া ধাক্কা দেন উমেশ যাদব, একই ওভারে সাজঘরে ফেরান শেহজাদ (৪৭) ও শোয়েব মাকসুদকে (০)।
পরের ওভারে উমর আকমলকে (০) আউট করে পাকিস্তানকে ভীষণ বিপদে ফেলে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি শহীদ আফ্রিদি (২২) এবং ওয়াহাব রিয়াজও (৪)। একই ওভারে দুজনকে আউট করেছেন মোহাম্মদ সামি। তবু লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিসবাহ। কিন্তু ৪৬তম ওভারে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর বিদায়ে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের সব আশা।
এই ম্যাচেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়লেন বিরাট কোহলি। সহ-অধিনায়কের ১০৭ রানের দারুণ ইনিংসের সুবাদে সাত উইকেট হারিয়ে ৩০০ রান করে ভারত। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে কোহলিকে ভালো সঙ্গ দিয়েছেন শিখর ধাওয়ান ও সুরেশ রায়না। ধাওয়ানের ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩ রান। রায়না করেছেন ৭৪ রান।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি ভারতের। অষ্টম ওভারে সোহেল খানের শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন রোহিত শর্মা (১৫)। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ১২৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন ধাওয়ান ও কোহলি। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই ভারতের সর্বোচ্চ জুটি। ৩০তম ওভারে ধাওয়ান পড়েন রান-আউটের ফাঁদে। তার আগে তিনি খেলেন ৭৬ বলে সাতটি চার ও একটি ছক্কায় ৭৩ রানের লড়াকু ইনিংস।
ধাওয়ানের উইকেট হারালেও পাকিস্তানকে স্বস্তিতে থাকতে দেননি কোহলি ও রায়না। তৃতীয় উইকেটে ১১০ রানের আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন দুজনে, ভারতকে নিয়ে যান বড় সংগ্রহের পথে।
৪৬তম ওভারে কোহলি যখন আউট হন, তখন ভারতের সংগ্রহ ২৭৩ রান। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কোহলির ১০৭ রানই সর্বোচ্চ ইনিংস। ২০০৩ সালে সাঈদ আনোয়ার করেছিলেন ১০১ রান। সেই ম্যাচেই ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৮ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন শচিন টেন্ডুলকার। ১০৭ রানের ইনিংসটি খেলার পথে সাতটি চার মেরেছেন কোহলি।
শেষদিকে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ১৩ বলে ১৮ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংস ৩০০ রান এনে দিয়েছে ভারতকে। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াই এই প্রথম দেখা পেল ৩০০ রানের।
পাকিস্তানের সফলতম বোলার সোহেল খান। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৫৫ রানের বিনিময়ে পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৫০ ওভারে ৩০০/৭ (রোহিত ১৫, ধাওয়ান ৭৩, কোহলি ১০৭, রায়না ৭৪, ধোনি ১৮, জাদেজা ৩, রাহানে ০, অশ্বিন ১, সামি ৩; সোহেল খান ৫/৫৫, ওয়াহাব রিয়াজ ১/৪৯)
পাকিস্তান : ৪৭ ওভারে ২২৪ (শেহজাদ ৪৭, ইউনুস ৬, হারিস ৩৬, মিসবাহ ৭৬, শোয়েব ০, আকমল ০, আফ্রিদি ২২, রিয়াজ ৪, ইয়াসির ১৩, সোহেল ৭, ইরফান ১; সামি ৪/৩৫, যাদব ২/৫০, মোহিত ২/৩৫, অশ্বিন ১/৪১, জাদেজা ১/৫৬)
ফল : ভারত ৭৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : বিরাট কোহলি