গল্প
সকাল ভরা রোদ্দুর
সকালের আমেজটা এখানে অনেকক্ষণ ধরে ভেসে বেড়ায়। ইশরাত ঘুম থেকে উঠে এ জানালা ওজানালা ঘুরে বেড়ায়। প্রত্যেক জানালা থেকেই অপূর্ব দৃশ্য চোখ ভরিয়ে দেয়। ইশরাতদের বাড়িটা ছোট্ট একটা টিলার ওপর । আশপাশের বড় পাহাড়গুলো সূর্যটাকে বেশ অনেকক্ষণ ঢেকে রাখে। ছায়া ছায়া ভাবটা তাদের বাড়ি জুড়ে ঘুরে বেড়ায় তাই অনেকটা সময় ধরে। বাসায় এখন সে আর বাপি। কাজের লোক, ড্রাইভাররা থাকে নীরবে। তাদের গলা শোনা যায় না। শোনা না যাওয়াটাই এখানকার রেওয়াজ। দোতালায় তো আরো কিছু শোনা যায় না। এখানে তাদের সবার বেডরুম আর একটা লিভিং। সামনে আর বাম দিকে বড় বড় দুটো ব্যালকনি।
ইফতি তার ছোট ভাই সেও বাড়িতে নেই। কয়েকদিন হলো ফুফুর কাছে জার্মানিতে বেড়াতে গেছে। তার এ লেভেল পরীক্ষা শেষ হতেই সে বায়না ধরল ফুফুর কাছে যাবে। বাপি অবশ্য তাকে বলেছে ওখান থেকে ইউএসে তার চাচার কাছ থেকেও ঘুরে আসতে। এ লেভেল শেষ হলে তার ওখানেই পড়ার কথা। মা গেছে ঢাকায়, অফিসের মিটিং আছে। হঠাৎ করে ইশরাতের মনে হয়- আচ্ছা বাপি আর মায়ের বছরে কয়বার দেখা হয়! বাপি বাড়ি থেকে কোথাও গেল তো সেখান থেকে ফিরতে না ফিরতে মা চলে গেল কোথাও। আবার মা ফিরে এলো তো বাপি চলে গেল। এবারে মা বেশ কয়েকদিনের জন্য গিয়েছে। কবে আসবে ঠিক করে বলে যায়নি। বাপিকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, বলবে- সেটা তোমার মা জানে। মায়ের রাবার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বাপি কোনো রকম ইন্টারফেয়ার করে না। মা অবশ্য নিজের ব্যবসা খুব ভালোভাবেই চালায়। নানা যখন তাঁর রাবার ইন্ডাস্ট্রি মাকে দেন তার আগে অনেকদিন সেখানে রীতিমতো চাকরি করিয়ে নিয়েছেন। মানে সমস্ত কাজ শিখিয়ে তবেই লিখে দিয়েছেন। মামার ক্ষেত্রেও তাই, তাকেও আগে সব শিখিয়ে তারপর শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিটা লিখে দিয়েছেন।
ইশরাত পায়ে পায়ে বামদিকের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। ঝকঝকে নীল আকাশের পটে সবুজ গাছগুলো ডালপালা মেলে উড়ে যেতে চাইছে। বাতাসে তার চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে যায়। কত রকমের গাছ পুরো বাড়িটা ঘিরে তার হিসেব নেই। ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া গাছগুলো থেমেছে টিলার ধার বেয়ে উঠে আসা কাল পিচের রাস্তাটার কাছে। তখনই তার চোখে পড়ে সাদা রঙের গাড়িটা। ইশরাত জানে ওটা তার বাপির হেড অফিসের গাড়ি। আর তাতে আসছে এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মল্লিক সাহেব। অফিসের কাজ নিয়ে সাধারণত উনিই বাসায় আসেন। অন্যরা এলেও খুব কম। আর অন্যান্য ব্যবসা, স্টিল মিল, ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোর কেউ তেমন একটা বাসায় আসে না। কিন্তু ইশরাত সব ইন্ডাস্ট্রির বড় কর্তাদের চেনে। বাপিই তাকে চিনিয়েছে। তাকে তো পড়তেও হয়েছে বিজনেস এডমিনেস্ট্রেশন নিয়ে। এটা হচ্ছে তাকে সব কিছুর জন্য তৈরি করা। এসব ভাবতে ভাবতে গাড়িটা তাদের গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে। মল্লিক সাহেব সামনের লনে পাতা চেয়ারে বসেন। সকালের আলাপ বাপি ওখানে করতেই পছন্দ করে। যদিও বাপির তৈরি হয়ে বের হতে এখনো একটু সময় লাগবে।
ইশরাত সামনের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। মল্লিক সাহেবকে সে মল্লিক আঙ্কেল বলেই ডাকে। চোখাচোখি হতেই ইশরাত হাত দেখায়। পঞ্চাশের মতো বয়স হবে। তবে সেই তুলনায় যথেষ্ঠ শক্ত-সামথ্য। মল্লিক সাহেব কিন্তু বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ইশারায় ইশরাতকে নিচে আসতে বলে। প্রথমে ইশরাত বুঝতে পারে না। তারপর অবশ্য মনে হয় অফিসের কোনো বিষয় হতে পারে। ইদানীং বাপি তাকে কোনো কোনো অফিস মিটিং থাকতে বলে। সেই কারণে হয়তো অফিসের বিষয়ে মল্লিক সাহেব কিছু বলতে চান। ইশরাত নাইটির ওপর একটা হাউজকোট চড়িয়ে নিচে নেমে আসে। কাছে গিয়ে ইশরাত সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করেন ‘আঙ্কেল কিছু বলছেন?’
মল্লিক সাহেব সালামের উত্তর না দিয়ে দ্রুত পকেট থেকে একটা খাম বের করে তার হাতে দেয়। কিছু বলার আগেই ফকরুল সাহেবের গলা পাওয়া যায়, ‘মল্লিক সাহেব এসে গেছেন?’
মল্লিক সাহেব চমকে ওঠে। একবার ইশরাতের হাতের খামের দিকে চেয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়।
‘স্যার কাল আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে বলে আপনাকে আর ফোন করিনি। আজ একেবারে কাগজপত্রসহ চলে এলাম।’
ইশরাত খামটা কোটের পকেটে ফেলে টিলার ধারের ফেন্সের দিকে এগিয়ে যায়। একবার আড় চোখে বাপিকে দেখে নেয়। ফকরুল সাহেব তখন অফিসের কাগজপত্র হাতে নিয়ে দেখছেন। ফেন্সের ধারে গিয়ে দাঁড়ায় ইশরাত। ওখান থেকে নিচে তাকালে বড় রাস্তাটা দেখা যায়। বাস, ট্রাক ছুটে চলেছে যে যার গন্তব্যে। আর তখনই ইশরাতের মনে হয় আজ তাকে একবার বের হতে হবে। তার বাইরে যাওয়ার কাগজপত্রের কাজ এখনো কিছু বাকি আছে।
সামনের গাছগুলোতে অনেক পাখি ডাকছে। অন্যদিন হলে ইশরাত আওয়াজ শুনে চেনার চেষ্টা করে কোনটা কোন পাখি। আজ কিছুতেই সে সবে মন যাচ্ছে না তার। পকেটের খামটা কিসের তা না জানা পর্যন্ত কিছুতেই মন বসবে না। সে বুঝতে পারছে মল্লিক সাহেব নিশ্চয়ই এমন কিছু তাকে দিয়েছে যেটা বাপির সামনে দেওয়া যাবে না। ইশরাত বোঝার চেষ্টা করে এটা কী হতে পারে। অফিস সংক্রান্ত কিছু। তাহলে বাপিকে না জানানোর কারণ কী! হতে পারে কারো কোনো কাজের সমস্যার ব্যাপারে জানতে চায়। হতে পারে সে লোক হয়তো বাপিকে ভুল বোঝাচ্ছে। এ রকম তো হয় বড় বড় কোম্পানিতে। তবে তেমন কিছু হলে ইশরাত গোপনে কিছু করবে না, বাপিকে সরাসরি বলবে। বাপি আর মল্লিক সাহেব লনের টেবিলে কাগজপত্রের মধ্যে ডুবে গেছে। ইশরাত তাদের পাশ কাটিয়ে উঠে যায় একেবারে দোতলায়।
ঘরে ঢুকে খামটা খুলে চিঠিটা বের করে। সম্বোধনে লেখা, ‘বুড়ে’। ইশরাত সাথে সাথে চিঠিটা বন্ধ করে বুকের কাছে চেপে ধরে। তারপর চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে। এই নামে তাকে শুধু তার কাকুই ডাকত। এত দিন পর কাকুর চিঠি কীভাবে এলো। এখনি পুরো চিঠিটা পড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। আবার ভয়ও করছে এতদিন পর কাকু তাকে
কেন চিঠি লিখেছে? কী আছে এই চিঠিতে? আর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে চিঠিটা খুলে ফেলে,
বুড়ে,
তোকে কত যে খুঁজেছি তা বলে শেষ করা যাবে না। তারপর হঠাৎ করেই পেয়ে গেলাম। বেশি সময় নেই তাই তাড়াতাড়ি করে লিখছি। মল্লিক সাহেবের সাথে হঠাৎ করেই দেখা। যখন পরিচয় পেলাম তখন মল্লিক সাহেবের এয়ারপোর্টের গাড়ি চলে এসেছে। উনি গেছেন হোটেলের বিল মেটাতে। এই ফাঁকে তোকে লিখছি। মল্লিক সাহেবের কাছে তোর মোবাইল ছোন নম্বর নেই। তোদের বাসার ফোন নম্বর দিতে পারতেন। কিন্তু ভেবে দেখলাম সম্পর্কটা এখন কোন অবস্থায় আছে তা না বুঝে তোর সাথে কথা বলা ঠিক হবে না। যদি আহতো হতে হয়।...
ইশরাত চিঠিটা আবার বন্ধ করে ফেলে। মনে মনে বলে, কাকু তোমার আমার সম্পর্ক এ জীবনে কি পাল্টাবার! বাবা কোনো কাজে বাইরে গেলে তুমি এসে কোলে না নিলে আমি ভাত খেতাম না, সে কথা কি ভুলে গেলে! বাইরে থেকে এসে চেঁচিয়ে যখন বলতে ‘আমার বুড়ে কোথায় রে?’, আমি দৌড়ে তোমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। সে কথা কি আমি কোনোদিন মন থেকে মুছতে পারব!
রাগ করিস না এভাবে লিখলাম বলে। আজকাল বড় ভয় হয়, মানুষকে। মানুষ কেমন যেন বদলে গেছে। আগে যেটা কদাচিৎ ছিল, এখন যেন অহরহ দেখি। তোর দাদা যখন হসপিটালে তখন খুব তোকে দেখতে চেয়েছিল। পুরোনো একটা নোটবুক ঘেঁটে তোর নানার বাড়ির ফোন নাম্বার পেলাম। ফোন করতেই ওপাশ থেকে খুব গম্ভীর গলা শুনতে পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম- ইশরাত আছে? পাল্টা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কে?’ বললাম, ‘আমি ইশরাতের কাকু।’ সাথে সাথে উত্তর এলো ‘ ইশরাত এখানে থাকে না, সে তার বাবার সাথে থাকে।’
তারপর ঘটাং করে ফোন কেটে গেল। আমি আর সাহস করে ফোন করতে পারিনি।...
ইশরাতের চোখের সামনে চিঠিটা ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কাকুদের সবার ওপর নানার সব সময় খুব রাগ ছিল। তখন জানত না কিন্তু এখন ইশরাত জানে। তার মা আর বাবার বিয়েটা কীভাবে হয়েছে। বাবা তখন আর্কিটেকচার পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করছে। বাবার তো শুধু শিক্ষকতা না, আরো কত কাজ। বিভিন্ন ফার্মে কাজ করে। নিজের টাকার জন্য না। সে সব টাকা চলে যেত তাদের দেশের বাড়ির বিভিন্ন মানুষের বাড়ি বানানোর কাজে। টাকার অভাবে কেউ হয়তো বাড়ি মেরামত করতে পারছে না। বাবার কানে পৌঁছানো মাত্র তার বাড়ি মেরামত হয়ে যেত। কারো হয়তো খড়ের ঘর পড়ো পড়ো, বাবা গিয়ে তাকে টিনের দোচালা করে দিল। বাবা ওই রকমই ছিল। সবার দায়িত্ব যেন একা তার। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন নামকরা ছাত্র ছিল শিক্ষক হিসেবেও তেমনি নাম হলো। মা পড়ত ম্যানেজমেন্টে। বাবার দুই বছরের জুনিয়র। এক ফাংশানে ছাত্র থাকা অবস্থাতেই পরিচয় হয়েছিল। সেই পরিচয় থেকেই বিয়ে। বাবা প্রথমে অনেক বোঝাবার চেষ্টা করেছিল, আমার সাথে তুমি এডজাস্ট করতে পারবে না। মা নাছোড়বান্দা, আমি সব পারি। কিন্তু বিয়ের পর মা কিছুটা হতাশ হয়ে যায়। তখন তার ঘোর কেটে গেছে। তারপরও হয়তো কিছুই হতো না। নানা সেই প্রথম থেকেই মাকে বুঝিয়েছে- তোমার জীবন এ রকম করে কাটাবার জন্য না। আমার এই ইন্ডাস্ট্রির একটা তুমি চালাবে আমি সেই স্বপ্নই দেখেছি। সে চেয়েছিল বাবাও তার ব্যবসায় যুক্ত হোক। কিন্তু বাবার চরিত্রই ছিল অন্য। যে দেশের মানুষের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রেখেছে তাকে দিয়ে কি অন্য কিছু হয়।
একাত্তরের যুদ্ধের সময় বাবার বয়স কম। কেউ তাকে যুদ্ধে যেতে বলেনি। এমনকি তাদের এলাকা সেভাবে আক্রান্তও হয়নি। অথচ সেখান থেকে ১০ মাইল দুরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয়। এক সময় মাও নানার সাথে একই সুরে কথা বলতে লাগে। কিন্তু বাবা অনঢ়, নিজের কাজ ছেড়ে কোথাও যাবে না। তবে প্রকৃতি বোধ হয় মাকে সুযোগ করে দিল। একটা দুর্ঘটনায় বাবা চলে গেল। আর সেই সাথে মা যেন মুক্তি পেয়ে গেল। নানা এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করল না। মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার নামে নিজের কাছে নিয়ে গেল। তারপর আর ছাড়ল না। ইশরাতের বয়স তখন পাঁচ। তাকে রেখেই নানার নির্দেশে মা অস্ট্রেলিয়া গেল পিএইচডি করতে। আর তারপর তো নানার কাছ থেকে ব্যবসার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে সেটাই ধ্যান-জ্ঞান হয়ে যায়।
চিঠিটা আবার মেলে ধরে ইশরাত। চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। সামনের টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু তুলে নেয়। চোখ মুছতেই ভেসে ওঠে কাকুর হাতের লেখা—
যাক এবার তোকে একটা খবর দেই। আমাদের এখানকার মানুষ তোর বাবাকে কেমন ভালোবাসে তা তো জানিস। তাদের দাবির মুখে এবার আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটা তোর বাবার নামে করা হচ্ছে। রাস্তার মাথায় একটা স্মৃতিস্তম্ভও তৈরি হবে। আগামী এগারই জুলাই সেটা উদ্বোধন হবে। বড়দার জন্মদিন ৩ মার্চ অনুষ্ঠানটা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটাতো পার হয়ে গেছে সব কিছু সম্পূর্ণ হতে হতে। তাই ঠিক হয়েছে তার মৃত্যু দিবসেই এটা করা হবে।
যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা খুলেই বলি। তোকে আসতে বলব কি না এখনো বুঝতে পারছি না। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস কেন। তবে তুই এলে আমরা যে কী রকম খুশি হবো সে কথা বলে বোঝানো যাবে না। আর তোর বাবা- তোর বাবা নিশ্চয়ই বহু দূর থেকে তোকে দেখে ভাববে আমাদের বুড়েটা কত বড় হয়ে গেছে।
ভালো কথা তুই যদি আসতে চাস আমি গিয়ে তোকে নিয়ে আসব। আর এই চিঠির গুরুত্ব যদি ইতিমধ্যে হারিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আর কথাই রইল না। আবার বলি রাগ করিস না, আমার এখন মানুষকেই বেশি ভয় লাগে। আজ এখানেই থাক। যেভাবেই থাকিস, ভালো থাকিস।
কাকু
চিঠিটা শেষ করে আবার চোখ ভিজে ওঠে ইশরাতের। কাকুর চিঠির গুরুত্ব যদি না থাকে তাহলে তার জীবনে আর কী আছে গুরুত্বপূর্ণ! চিঠিটা আলমারির একটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখে সে। এই চিঠিটা এ বাড়ির কারো সামনে পড়ুক তা সে চায় না। বাইরে গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যায়। মল্লিক আঙ্কেল নিশ্চয়ই চলে গেল। তখন তারও মনে পড়ে বাইরে যাওয়ার কথা। তার স্কলারশিপের কাগজপত্র ঠিক করতে বের হতে হবে। আগামী মাসের মানে জুনের শেষ সপ্তাহে তার ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। হঠাৎ মনে হয় তাই তো জুলাই মাসে সে তো দেশে থাকবে না। তাহলে বাবার অনুষ্ঠানে সে থাকতে পারবে না। কাকুকে তাহলে কী বলবে! এসব ভাবতে ভাবতে সে তৈরি হতে থাকে।
তার জন্য বরাদ্দ গাড়িটায় কী যেন সমস্যা হয়েছে। সেটা এখন মেরামতে গেছে। পুরোনো একটা গাড়ি আছে যেটা আসলে তেমন কেউ ব্যবহার করে না। সেটা নিয়েই বের হয় ইশরাত। ড্রাইভারকে আগেই বলা ছিল এই গাড়িতে সে যাবে। আগেভাগেই তাই সেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা আছে। তবুও গাড়িটার ভিতর কেমন একটা পুরোনো গন্ধ। গন্ধটাই হঠাৎ করে ইশরাতকে মনে করিয়ে দেয় তার দাদাবাড়ির কথা। বছরে একবার যখন তারা সেখানে যেত তখন ঘরগুলো খুলে এ রকম গন্ধ পাওয়া যেত। তারা ঢাকায় দাদা-দাদি কাকাসহই থাকত। আর যখন বাড়ি যেত তখন সবাই মিলেই যেত। এমনকি ফুফুও এসে হাজির হতো ফুফা আর ফুফুত ভাই বোনসহ। ফুফুত ভাই বোনরা ইশরাতের চেয়ে বেশ বড় ছিল। কিন্তু তাদের সাথে সেই কটা দিন খেলা করে গল্প করে কী আনন্দেই কাটত।
কাজ শেষ করে ইশরাত ঠিক করে মল্লিক সাহেবের কাছে যাবে। ইশরাতকে অফিসের প্রায় সবাই চেনে। সে মাঝে মাঝে এখানে এসেছেও। তবে সেটা তার বাপির সাথে। আজকে তাকে একলা দেখে অবাক হয় অনেকে। রিসিপশনে মল্লিক সাহেবের কথা বলতেই একজন বেয়ারা এসে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। মল্লিক সাহেব রুমেই ছিল। ইশরাত সামনের চেয়ারে বসলে দুজন তাকায় দুজনের দিকে। কিছুক্ষণ কোনো কথা হয় না। যদিও মল্লিক সাহেব বুঝতে পারছে ইশরাত কেন এসেছে। সে ভেবেছিল বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত জানতে ইশরাত বোধ হয় ফোন করবে। একেবারে অফিসে চলে আসবে সে ভাবেনি। নীরবতা ভেঙে ইশরাতই কথা বলে, ‘কেমন দেখলেন কাকুকে?’
‘খুবই প্রাণবন্ত মানুষ মুকুল সাহেব... তোমার বাবাকে তো আমি কয়েকবার দেখেছি। আমি যখন তোমার নানার ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করতাম তখন মাঝে মাঝে ঢাকায় যেতে হতো। তোমার মনে আছে কি না...’
‘একটু একটু।’ ইশরাত উত্তর দেয়।
‘আমি যে হোটেলে উঠেছিলাম, সেখানেই একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিল। আমি তখন এয়ারপোর্টের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। পাশের টেবিলের ভদ্রলোকের চেহারা চেনা চেনা লাগছে। তোমার কাকুর চেহারা তোমার বাবার চেহারার সাথে অনেক মিল।’
‘হ্যাঁ কাকুর চেহারা অনেক মিল বাবার সাথে।’
‘উনি যে ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছিলেন মনে হয় তিনি তোমার কাকুর কলেজের কোনো অনুষ্ঠানে গেস্ট হয়ে এসেছেন। উনি বলছিলেন তোমার কাকুকে- আরফিন সাহেব আপনি আপনার বিষয়ে পণ্ডিত মানুষ। ঠিক আপনার ভাইয়ের মতো। তোমার কাকু ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন- না না বড়দার সাথে আমার তুলনা করবেন না। ভদ্রলোক সাথে সাথে বলেন- সেটা ঠিকই বলেছেন, ইমতিয়াজ সাহেবের সাথে তুলনা করা যায় না।
আমি সাথে সাথে বুঝে যাই ইনি তোমার কাকু।’
আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে দুজনে। আবার ইশরাত কথা বলে ওঠে, ‘কি পড়ান আমার কাকু?’
‘ও তোমার কাকু কলেজে ইতিহাস পড়ান।’
কাকুর কথা মনে করেই বোধ হয় ইশরাতের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মল্লিক সাহেব সেটা খেয়াল করে কি না, বলেন- মুকুল সাহেব যে বেশ নাম করা লোক তা আমি আগেই জানতাম। অনেক পত্রিকায় আরফিন আহমেদ নামে লেখা পড়েছি। তবে উনি যে তোমার কাকু তখন জানতাম না। যাই হোক এর মধ্যে মুকুল সাহেবের সাথের ভদ্রলোক উঠে কোথাও গেলেন। পরে বুঝলাম রুমে গিয়েছিলেন কোনো একটা বই আনতে। আর ওই ফাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলাম- আপনার ভাই ইমতিয়াজ সাহেব কি আর্কিটেক্ট ছিলেন। সাথে সাথে মুকুল সাহেব আমার টেবিলে উঠে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন- আপনি চেনেন দাদাকে? আমি আমার পরিচয় দিলাম। হাতে তখন খুব একটা সময় ছিল না আমার, প্লেনের সময় হয়ে গেছে। তোমার কাকু দ্রুত ওই চিঠিটা লিখে দিলেন।
ইশরাতের চোখে আবার পানি চলে আসছে। সে অতি কষ্টে সেটা সামলে জিজ্ঞেস করে, ‘কাকুর কাছে জিজ্ঞেস করেননি আমার দাদি কেমন আছে?’
‘নারে মা, আমার গাড়ি এসে গিয়েছিল, আর কিছু জিজ্ঞেস করার সময় পাইনি।’
ইশরাত আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া আর কেউ নেই। সে চলে যায় নিজের ঘরে। জামা কাপড় না ছেড়েই আলমারি থেকে চিঠিটা আবার বের করে। মেলে ধরে সেটা চোখের সামনে। কিছুই পড়তে পারে না ইশরাত। কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আছে সবটা। হাত বাড়িয়ে কাগজ আর কলম নেয় সে। কাকুকে আজই চিঠি লিখতে হবে। যদিও আজ আর বাইরে যাওয়া হবে না বলে পোস্ট করা হবে না। অন্য কারো হাতে তো এ চিঠি পোস্ট করতে দেওয়া যাবে না। সাদা কাগজের ওপর কলমটা ধরে ভাবে ইশরাত কী লিখবে! কিছুটা সময় চুপ করে বসে থাকে। তারপর লিখতে শুরু করে—
কাকু,
আমি জানি তুমি ভালো নেই। তোমার বুড়েকে ছাড়া তুমি ভালো থাকবে কীভাবে! অথচ তাকে দেখ, কেমন সবাইকে ভুলে বসে আছে। তাই তো মনে হয় কাকু, তাই না! কিন্তু তুমি কি জান তোমার বুড়ের হাত পা বাঁধা। সে কিছু চাইলেই করতে পারে না। তাকে সব কিছু রুটিন মাফিক করতে হয়।
আমি জানি তুমি এ সবই জান। আর জান বলেই আমার ওপর রাগ করতে পার না। ঠিক বলেছি না কাকু?
তোমার চিঠি পাওয়ার পর থেকে আমার ভিতরে একটা বাঁধ ভেঙে গেছে। হুড়মুড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসছে কত না স্মৃতি। হ্যাঁ, সামান্য যে কয়েকটা বছর তোমাদের সাথে ছিলাম তার স্মৃতি তো অন্তহীন। তারপরের বাকি জীবনটার স্মৃতি বলতে সামান্য কিছু ছক বাঁধা ঘটনা। আমার যা কিছু উচ্ছ্বাসের তা ওই ছোট্ট সময়টুকুতেই।
তোমার কাছে জানতে চাব না- দাদি কেমন আছে? আমি জানি ভালো নেই। কিন্তু তুমি আমার মন যাতে খারাপ না হয় তাই বলবে ভালো আছে।
কত দিন তোমাদের দেখি না। আজ যখন তুমি একটা যাওয়ার সুযোগ এনে দিলে তখনো আমার পা বাঁধা। আমি স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাচ্ছি অস্ট্রেলিয়া। আগামী জুন মাসের শেষের দিকে আমাকে চলে যেতে হবে। কী করি বলো তো! বুঝতে পারছি না।
ও একটা কথা, মল্লিক কাকুর কাছে শুনলাম তুমি বিয়ে করোনি। কেন? আমি একটা চাচি পেতাম। বুঝেছি, নিশ্চয়ই বাবার মতো দুনিয়ার সবার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছ।
আর কী লিখব আজ মাথায় আসছে না। কেবল মনে হচ্ছে আমার লেখা চিঠিটা এখুনি তোমার হাতে চলে যাক। আমার মোবাইল নম্বর আর ইমেইল অ্যাড্রেস দিলাম। আমি জানি তুমি ফোনে মোটেও বেশিক্ষণ কথা বলতে পার না। তাই তুমি চিঠিই লিখ। তবে একবার ফোনেও কথা বলো, তোমার গলাটা শুনতে ইচ্ছে করছে খুব।
তোমার বুড়ে
এর কয়েক দিন পর ইশরাতের মোবাইলে একটা মেসেজ এলো, তাতে শুধু লেখা ‘কাকু’ । আর তার পর পরই ফোনটা এলো- ‘কে রে, আমার বুড়ে নাকি!’
ইশরাত শুধু বলতে পারল, ‘কাকু...’ এরপর শুধু হাউ অঝোর কান্নার শব্দ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ বের হয় না তার গলা থেকে।
মুকুল কিছুক্ষণ তাকে কাঁদতে দেয়। এরপর বলে, ‘থাকরে বুড়ে তুই এখন কেঁদে নে। পরে তোর সাথে কথা বলা যাবে। এখন আমারও কান্না এসে যাচ্ছে।’
সেদিন ইশরাতের মেইলে মুকুলের চিঠিটাও আসে।
বুড়ে
তোর ওপর রাগ করব তেমন দিন যেন না আসে। তোর বাবার চলে যাওয়ায় তোকে ঘিরেই তো আমাদের স্বপ্নগুলো দানা বাঁধছিল। তারপর কোথা থেকে কী হয়ে গেল। এ জীবনে অনেক কিছু হারালাম তো। আপা আর আমি পিঠোপিঠি। তার বিয়ের পর বেশ একা লাগত। বড়দার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য বেশ। তারপরও এক সময় তার সাথেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কিন্তু একদিন সেও আমাদের সঙ্গ ছাড়ল। আর প্রায় সেই সাথে তোর মাও চলে গেল। সবচেয়ে বড় যে ধাক্কা খেলাম তোকে নিয়ে। তুই থেকেও থাকলি না।
যাক ভেবে ভালো লাগছে যে তুই সেই আমাদের আগের বুড়েই আছিস।
তোর বাবার অনুষ্ঠানে আসতে পারবি না বলে মন খারাপ করিস না। পড়াশোনাটাও কম গুরুত্বপূর্ণ না। তুই একদম ভাবিস না এসব নিয়ে। নির্দ্ধিধায় অস্ট্রেলিয়া চলে যা।
অনেক দিন কাছে নেই তো আর কি জিজ্ঞেস করার আছে মনে পড়ছে না। তবে কেবলই মনে হচ্ছে যদি তোর সামনে পড়ি তাহলে সারাদিন তোর সাথে কথা বললেও ফুরাবে না। তোর দাদি মাঝেমধ্যেই তোর কথা মনে করে কাঁদে। যা হোক একদিন এসে দাদির গলা জড়িয়ে সেই কান্না মুছিয়ে দিয়ে যাস, সব ঠিক হয়ে যাবে।
ভালো থাকিস।
কাকু
এরপর বেশ কয়েক বার কাকুর সাথে যোগাযোগ হয়েছে ইশরাতের। সে যে একটু এলোমেলো হয়ে আছে সেটা মায়ের চোখ এড়ায়নি। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে- ‘তোমাকে একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে কেন?’
ইশরাত একটু ঘাবড়ে যায়। তারপরও সামলে নিয়ে বলে ‘কই না তো।’
‘কোনো সমস্যা হলে বলো।’ তারপর অবশ্য মা আর দাঁড়ায় না।
আকাশটা মেঘলা হয়ে ছিল একটু আগেও। এক পশলা হালকা বৃষ্টি হয়ে গেছে। মুকুল জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দেয়। এখন আর বৃষ্টি নেই। আকাশটাও অনেক পরিষ্কার হয়ে গেছে। সূর্য না উঠলেও একটা ঝকঝকে আলো যেন দেখা যাচ্ছে। আজ এগারই জুলাই। বড়দার নামের রাস্তা উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠান শুরু হবে বেলা ১০টার দিকে। এখন বাজে ৬টা। একবার গিয়ে স্মৃতি স্তম্ভটা দেখে আসতে ইচ্ছে করছে। যদিও কাল রাতেই সব ঠিক করা হয়ে গেছে। স্তম্ভটা ঢাকা আছে একটা সাদা কাপড় দিয়ে। প্রধান অতিথি যদি আসতে দেরি না করে তাহলে ঠিক ১০টাতেই অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। ঘর থেকে বের হয়ে আসে মুকুল। রাস্তাটার মাঝামাঝি তাদের বাড়ি। এখান থেকে মোড় পর্যন্ত হেঁটে যেতে ১০-১২ মিনিট লাগবে। রাস্তাটা ভিজে ভিজে। গাছের পাতাগুলো পানিতে ধুয়ে গেছে। তাতে আলো পড়ে পিছলে যাচ্ছে যেন। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। হাঁটতে হাঁটতে মোড়ের কাছে চলে আসে মুকুল। সাদা বেদিটা পানিতে ভিজে চকচক করছে। হঠাৎ তার নজরে পড়ে কি যেন একটা বেদির ওপর রাখা। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে কাছে যায় মুকুল। এক গোছা রজনীগন্ধা। হাতে তুলে নেয় ফুলগুলো। একটা কার্ড আছে ফুলের সাথে। তাতে লেখা, ‘আমার ব্যাথার পূজা হয়নি সমাপন’। অবাক হয় সে, এত সকালে কে এটা রেখে গেল।
এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। আর তখনই চোখে পড়ে উল্টো দিকে সাবিত্রী পিসিদের বাড়ির বাইরের বারন্দায় কে যেন। বারান্দায় উঠতে উঠতে দেখে একটা মেয়ে দুই হাঁটুর ভিতর মুখ গুঁজে বসে আছে। মুকুলের মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে, ‘বুড়ে নাকি রে!’
ঝট করে উঠে দাঁড়ায় মেয়েটা। তারপর ‘কাকু’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুকুলের বুকে। মুকুলের চোখ ভিজে ওঠে। ধরা গলায় বলে, ‘এই বোকা মেয়ে বাড়ি না গিয়ে এখানে বসে আছিস কেন!’
কাঁদতে কাঁদতে কোনো মতে ইশরাত বলে, ‘এত দিন পর বাড়িটা ঠিক চিনতে পারছিলাম না।’
‘কাউকে জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যেতিস।’
‘তখন লোকজন তেমন ছিল না। আর মনে হলো অনুষ্ঠান তো সকালেই শুরু হওয়ার কথা বরং এখানেই থাকি।’
‘কিন্তু তোর পিএইচডি?’
একটু হাসে ইশরাত, ‘পিএইচডি তো আজ না হলে কাল করা যাবে। কিন্তু এই দিনটা তো আর কোনোদিন ফিরবে না কাকু।’
মুকুল কোনো কথা বলতে পারে না। শুধু ইশরাতের মাথায় হাত রাখে।
তাদের কথার আওয়াজে বাড়ির দরজা খুলে যায়। সাবিত্রী পিসি বের হয়ে আসে। তাদের দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘এ কিডা রে?’
মুকুল চোখ মুছতে মুছতে বলে, ‘দেখ তো পিসি চিনতে পার কি না?’
ইশরাতের মুখটা চোখের সামনে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, ‘আরে এ আমাগে রঞ্জুর মাইয়ে না!’
‘হ্যাঁ গো পিসি, এত দিন পর তোমাদের দেখতে এসেছে।’
ইশরাতের তখন মনে পড়ে তার বাবার ডাক নাম রঞ্জু। কেমন অদ্ভুত লাগে এই নামটাও সে প্রায়ই ভুলে গিয়েছিল।
পিসি পিড়াপিড়ি তার ঘরে সময়টা কাটিয়ে যেতে, ‘দেখদিনি সেই কখন থেকে না খেয়ে আছে, ঘরে ঢোক কিছু একটা মুখি দে।’
মুকুল বলে ‘থাক পিসি আগে একটু ওর দাদির সাথে দেখা করে আসুক।’
পিসি আর আপত্তি করে না, ‘তা ঠিক কত দিন নাতনিরি দেখেনি।’
রাস্তায় নেমে বসে পড়ে ইশরাত। সদ্য পিচ করা রাস্তার ওপর হাত বোলায় সে। এটা তার বাবার নামে রাস্তা। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কাকুর হাত ধরে হাঁটতে থাকে। তখন একটুখানি রোদ আকাশ ছেড়ে নেমে এসেছে রাস্তায়। ইশরাত আর কাকু সেই রোদ গায়ে জড়িয়ে হেঁটে যায়।