মিয়ানমারে ফিরলেও নাগরিকত্ব পাবে না রোহিঙ্গারা!
বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে গেলে রোহিঙ্গাদের কোনো নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এমনকি চলাফেরার স্বাধীনতাও থাকবে না। জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছে তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
গত মে মাসে শেষে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি করে জাতিসংঘ, যাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতির কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
গতকাল শুক্রবার রয়টার্স জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) একটি অনুলিপি পর্যালোচনা করেছে। এটি অনলাইনেও ছড়িয়ে পড়েছে।
সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে ফিরলে রাখাইন রাজ্যে অন্য নাগরিকরা যে সুবিধা ভোগ করে তারাও একই সুবিধা পাবে। বিদ্যমান আইন ও বিধান অনুযায়ী তা করা হবে।
রয়টার্স যে লেখাটি পর্যালোচনা করেছে তাতে রাখাইন রাজ্যের বাইরে চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চয়তার কথা উল্লেখ নেই। বর্তমান আইন ও বিধানে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যের বাইরে চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শরণার্থী নেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি চুক্তিতে। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে দেখে আসছে।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক লরা হেই বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরার মানে হলো জাতিবিদ্বেষপূর্ণ রাজ্যে ফেরা, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, স্কুলে যেতে পারবে না, চিকিৎসা পাবে না ও কর্মস্থলে যেতে পারবে না।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংগঠন ইউএনএইচসিআর এর আগে বলেছিল, মিয়ানমারের সঙ্গে সহযোগিতার প্রথম ও জরুরি কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষে এই সমঝোতা স্মারক হয়েছে।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হতায় ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে-কে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালকও এ বিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে তাকেও পাওয়া যায়নি।
দুই আন্তর্জাতিক সংস্থার সূত্রের বরাত দিয়ে সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। ৩০ মের খসড়াটি চুক্তি হওয়ার একদনি আগে লেখা হয়।
মানবিধকার ও ত্রাণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মিয়ানমার থেকে জোরদার কোনো ছাড় বা পায়নি।
জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেন, ছড়িয়ে পড়া নথি সম্পর্কে মন্তব্য না করাই তাদের নীতি। তিনি বলেন, ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআর এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে সমঝোতা স্মারকটি প্রকাশের ব্যাপারে।
মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা। তারা রোহিঙ্গাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকার করে না। সরকার এদের বাঙালি হিসেবে অভিহিত করে এবং বলে তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করেছে।
বেশির ভাগ রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, নাগরিকত্ব ও চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা না পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরবেন না।