মংলা বন্দরের আয় কমেছে ২৫ শতাংশ
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়ে ভাটা পড়েছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় গত ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে বন্দরের আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আর এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, মংলা বন্দরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক ও সচল রয়েছে। তবে সড়কপথে পণ্য পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
মোস্তফা কামাল বলেন, গত ডিসেম্বরে এই বন্দর দিয়ে মোট চার লাখ ৪৭ হাজার ৮০০ টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ১০ হাজার ৪৫০ টন। আর জানুয়ারি মাসে পণ্য আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ সাত হাজার ৩৫৯ টন। এর মধ্যে রপ্তানি পণ্য ১০ হাজার ১৮৮ টন। এ হিসাবে জানুয়ারিতে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, গত ডিসেম্বরে জেটি ও জেটির অভ্যন্তরে ২২টি খাতে বন্দরের আয় দুই কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এসব খাতে জানুয়ারিতে আয় দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে জানুয়ারিতে আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আর চলতি মাসেও আয় কমবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে রাজস্ব আহরণের বিবরণ এখনই পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান।
মংলা বন্দর দিয়ে মূলত কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, টাইলস ও হাড়ের গুঁড়া রপ্তানি হয়। আর আমদানি হয় খাদ্যসামগ্রী, গাড়ি ও সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আমদানি পণ্যে যোগ হয়েছে কয়লা। এর মধ্যে কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, সহিংসতার ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকচালকরা পণ্য পরিবহনে রাজি হন না।
কনটেইনারবাহী জাহাজ সময়মতো বন্দরে ভিড়ছে। কিন্তু সময়মতো পর্যাপ্ত হিমায়িত চিংড়ির কনটেইনার জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া বন্দরে আসা পণ্যবাহী কনটেইনারও সময়মতো ছাড় করিয়ে সড়কপথে পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও প্রয়োজনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, খুলনা অঞ্চলের পাট, পাটজাতসহ বিভিন্ন পণ্য মংলা, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। কিন্তু টানা অবরোধে বন্দর পর্যন্ত পাট পৌঁছানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ রপ্তানিযোগ্য পাট গুদামে পড়ে আছে। ফলে ব্যাংক সুদের পরিমাণ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাট ব্যবসায়ীরা।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকরাও ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন করতে চাইছেন না। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করছেন। এ ছাড়া পথে বিড়ম্বনার কারণে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের।
লকপুর গ্রুপ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এম আমজাদ হোসেন জানান, অবরোধ-হরতালে আমদানি করা কাঁচামাল কারখানায় আনতে না পারায় ১৩টি প্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান এখন তিন শিফটের পরিবর্তে এক শিফট করে চালাতে হচ্ছে। মংলা বন্দরের জেটিতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা অনেক কাঁচামাল আটকে আছে।
হরতাল-অবরোধের কারণে বন্দরে জেটির শ্রমিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, বন্দরের বাইরে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য জেটি হতে ট্রাকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে যুক্ত অন্তত তিন শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।