কে এই ইনারিতু
ছবি করেছেন মাত্র পাঁচটি। আর অস্কারে একবারেই চার নম্বর পুরস্কার! বার্ডম্যান ছবির পরিচালক আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু হচ্ছেন দ্বিতীয় মেক্সিকান পরিচালক, যিনি একই সাথে অস্কার এবং ডিরেক্টরস গিল্ডে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন। এই কীর্তিটা আগে যে মেক্সিকান করেছেন তাঁর নাম আলফানসো কুয়ারন, ‘গ্র্যাভিটি’ ছবির পরিচালক তিনি।
ইনারিতুর প্রথম ছবি আমরেস পেরোস, মুক্তি পায় ২০০০ সালে। এরপর একে একে মুক্তি পায় টোয়েন্টি ওয়ান গ্রামস (২০০৩), বাবেল (২০০৬), বিউটিফুল (২০১০), বার্ডম্যান (২০১৪) আর হাতে আছে দ্য রেভেন্যান্ট ছবির কাজ।
ইনারিতুর জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৫ আগস্ট। মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির নারভারতে এলাকায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। ঘরোয়া পরিবেশে গান এবং সাহিত্য নিয়ে অল্প বয়সেই অনেক জেনে ফেললেও স্কুলে গিয়ে খুব একটা উন্নতি করতে পারেননি।
স্কুল ফেল ইনারিতু হয়ে যান একজন পেশাদার নাবিক। সেই কিশোর বয়সেই। ১৭ থেকে ১৯ বছর বয়সে জাহাজে করে আফ্রিকা আর ইউরোপ দেখে ফেলেন ইনারিতু। এই অল্প বয়সে চোখ খুলে যাওয়া অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনকে এবং সিনেমাকে উন্নত করেছে বলে দাবি তাঁর।
স্কুল থেকে বের করে দিলেও আবার পড়ার টেবিলে ফিরেছিলেন ইনারিতু। ইবেরোমেরিকানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগবিদ্যায় লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮২ সালে রেডিওর আরজে হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ডব্লিউএফএম রেডিও স্টেশনটি ছিল মূলত রক গানের রেডিও।
ছয় বছরের মাথায় রেডিওটির পরিচালকের দায়িত্ব পান ইনারিতু। এরপর টেলিভিশনের জন্য প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন তিনি। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রতিষ্ঠান জেড ফিল্মস। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেশকিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজ করেন তাঁরা।
কাহিনীচিত্র বানানোর স্বপ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ইনারিতুর ভেতরে। ১৯৮০-র দশকে বেশকিছু মেক্সিকান ছবির সংগীতের কাজ করেছিলেন তিনি। এবার পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি বানানোর স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান মার্কিন মুলুকে। হাতে-কলমে শিখে আসেন সিনেমার কলাকৌশল।
মেক্সিকান সাহিত্যিক গুইল্লেরমো আরিআগার গল্প নিয়ে তাঁর সাথেই শুরু করেন প্রথম ছবি অ্যামরেস পেরোসের চিত্রনাট্যের কাজ।
কয়েকটি আলাদা গল্পকে নিয়ে এক করে বানানো এই অ্যান্থোলজি ফিল্ম ইনারিতুর চলচ্চিত্রযাত্রাকে সহজ করে দেয়। ভালো সাড়া পান এই ছবির বদৌলতে। অস্কারে সেরা বিদেশি ছবির মনোনয়নও জুটেছিল প্রথম ছবি থেকেই।
এরপর টোয়েন্টি ওয়ান গ্রামস এবং বাবেল ছবিতেও একসাথে কাজ করেন আরিআগার ও ইনারিতু। এই তিনটি ছবিকে একসাথে অনেকে ট্রিলোজিও বলে থাকেন। গল্পের মিল তেমন একটা না থাকলেও গল্পের ধরন এবং চিত্রগ্রহণসহ এই জুটির বোঝাপড়ার কারণেই তিনটি ছবিই একই পথে হেঁটেছে।
এরপর ২০১০ সালে ‘বিউটিফুল’ ছবিটি পরিচালনা করেন ইনারিতু। এরপরেই ধরেন ‘বার্ডম্যান’ ছবির কাজ। চলচ্চিত্রের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকান অভিবাসীদের দুর্দশার ব্যাপারে সব সময়েই সোচ্চার ইনারিতু। আর এবার অস্কারেও এ বিষয়ে ঠাট্টার ছলে কথা বলেন তিনি।