জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে বা সংশোধনে কী করবেন
দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা পেতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা আবশ্যক। আবার যাঁরা নতুন পরিচয়পত্র করতে চান, তাঁদের অনেকেই এ বিষয় সম্পর্কে অবগত নন। অনেকে আবার জানেন না, কীভাবে পরিচয়পত্র করতে হবে, এ জন্য কোথায় যেতে হবে , কী কী প্রয়োজন ইত্যাদি।
আবার পরিচয়পত্র ছিল, হারিয়ে গেছে বা পরিচয়পত্রে ভুল তথ্য রয়েছে সংশোধন করা প্রয়োজন—এমন অনেকেই আছেন বুঝতে পারছেন না, তাঁরা কীভাবে নতুন পরিচয়পত্র পাবেন বা ভুল তথ্য ঠিক করবেন। তাঁদের জন্যই আমাদের এই বিশেষ আয়োজন।
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে হলে
বাংলাদেশে কারো বয়স ১৮ বছর হলেই কেবল তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ভোটার তালিকায় নাম ওঠাতে পারেন। দেশের প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে এ-সংক্রান্ত আবেদন জমা দিতে হবে। সেখানে পরিচয়পত্র বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সপ্তম তলায় আবেদন করে তৈরি করে নিতে পারেন নিজের পরিচয়পত্র।
এবার চলুন, জেনে নেওয়া যাক, আপনার নতুন পরিচয়পত্র করতে হলে যা যা লাগবে :
১. এসএসসি বা সমমানের সনদ, ২. নাগরিকত্ব সনদ, ৩. জন্মনিবন্ধন সনদ, ৪. চাকরির প্রমাণপত্র, ৫. পাসপোর্ট, ৬. নিকাহনামা, ৭. পিতা, স্বামী কিংবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত এসব নথি অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা নথির মধ্যে যাঁর যা ঘটেনি, তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন : যাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির কম, তাঁকে এসএসসি বা সমমানের সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে না। আবার কেউ যদি চাকরি না করেন, তাঁকে চাকরির প্রমাণপত্র দিতে হবে না। যাঁদের পাসপোর্ট নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে তা দেওয়ার দরকার নেই।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে আপনার নিকটবর্তী থানায় ভোটার নম্বর বা আইডি নম্বর উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। এর পর জিডির মূল কপিসহ প্রকল্প কার্যালয় থেকে নেওয়া আবেদনপত্র নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র নিতে হবে। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লেখ করা তারিখে ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।
কিন্তু আপনি যদি দেখেন, নতুন করে পাওয়া পরিচয়পত্রে ভুল আছে, তখন কী করবেন? চলুন জেনে নিই, পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনে কী করতে হয়।
সংশোধনে করণীয়
এক কপি ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রদান প্রকল্পের পরিচালকের কাছে আবেদনপত্র লিখতে হবে। আর এই আবেদনপত্র পাওয়া যায় আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের নিচতলায়। সেখানে ফরম পূরণ করে জমা দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। ওই তারিখে রসিদসহ গিয়ে আপনাকে নিয়ে আসতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র।
যদি নাম পরিবর্তন করতে চান
জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম বদল করতে হলে আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে এসএসসি বা সমমানের সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। শিক্ষাগত যোগ্যতা এর নিচে হলে দেওয়ার দরকার নেই। বিবাহিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত নাম পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের কপি নাম পরিবর্তনের জন্য প্রার্থীকে শুনানির দিন প্রকল্পের কার্যালয়ে কাগজপত্রের মূল কপিসহ হাজির হতে হবে।
স্বামীর নাম সংযোজন বা বাদ দেওয়া
বিয়ের পর কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রে স্বামীর নাম যুক্ত করতে চাইলে তাঁকে কাবিননামা ও স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। আর বিবাহবিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে আবেদনকারীকে তালাকনামার সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
পিতা বা মাতার নাম পরিবর্তন
পিতা বা মাতার নাম পরিবর্তন করতে হলে আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে এসএসসি বা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদ অথবা রেজিস্ট্রেশন কার্ড। পিতা বা মাতার পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি পিতা বা মাতা বা উভয়ে মৃত হলে দিতে হবে ভাই বা বোনের পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। পিতা-মাতার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিতে পারেন।
জন্মতারিখ সংশোধন
যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের, তাঁদের আবেদনপত্রের সঙ্গে এসএসসি বা সমমানের সনদের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে। বয়সের পার্থক্য অস্বাভাবিক না হলে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লেখ করা তারিখে সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়। অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সনদের মূল কপি প্রদর্শন কিংবা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে পারে। যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের কম, তাঁদের জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার আগের তারিখে পাওয়া সার্ভিস বুক বা এমপিওর কপি ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মসনদ, নিকাহনামা, পাসপোর্টের কপি প্রভৃতি। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রকল্প পরিচালক আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া দরকার হলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করা হয়।