এমসিজিতে হতাশার অভিষেক
টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটের ‘জন্মভূমি’ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন থাকে সব ক্রিকেটারের। আর সেটা যদি হয় বিশ্বকাপের মঞ্চ, তাহলে তো কথাই নেই! ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামটিতে বর্ণিল অভিষেকের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই হতাশার জন্ম দিয়ে শ্রীলঙ্কার কাছে ৯২ রানে হেরে গেছে মাশরাফির দল।
এই বিশাল হারে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল-স্বপ্নও ধাক্কা খেয়েছে। তিন ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থান আপাতত চতুর্থ। সমান ম্যাচ খেলে ৬ ও ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। একটি ম্যাচ কম খেলে ৩ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আছে তৃতীয় স্থানে।
ক্রিকেট-দুনিয়ায় এমসিজি নামে পরিচিত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এনামুল-মুমিনুল-মুশফিকদের নড়বড়ে ফিল্ডিং পুরো ম্যাচে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। ক্যাচ-স্টাম্পিং-রান আউট কী ‘মিস’ করেননি বাংলাদেশের কিপার-ফিল্ডাররা! সেসব ভুল কাজে লাগাতে ভুল করেননি শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা। সেঞ্চুরি দিয়ে ক্যারিয়ারের ৪০০তম ওয়ানডে স্মরণীয় করে রেখেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। শ্রীলঙ্কার আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তিলকারত্নে দিলশানের ব্যাট থেকে এসেছে ক্যারিয়ারসেরা ১৬১ রান। সঙ্গে লাহিরু থিরিমান্নের ৫২ রানের সুবাদে মাত্র এক উইকেট হারিয়েই ৩৩২ রানের ‘পাহাড়’ গড়েছে শ্রীলঙ্কা।
৩৩৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। লাসিথ মালিঙ্গার করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলে তামিম ইকবালের বোল্ড দিয়ে পতনের শুরু। ষষ্ঠ ও সপ্তম ওভারে সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হকের বিদায়ে বিপদে পড়ে যাওয়া দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা হারের ব্যবধানই শুধু কমাতে পেরেছে।
পাঁচটি বাউন্ডারিতে ১৫ বলে ২৫ রান করে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের শিকার হয়েছেন সৌম্য। সুরঙ্গা লাকমলের বলে আউট হয়ে মুমিনুল ফিরে গেছেন মাত্র এক রান করে। এনামুল হক দুবার ‘জীবন’ পেলেও ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি। থিসারা পেরেরার বলে আউট হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহর অবদান ২৮ রান।
১০০ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর ৬৪ রানের জুটি গড়ে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন সাকিব ও মুশফিক। কিন্তু সাকিব ৪৬ ও মুশফিক ৩৬ রান করে আউট হয়ে গেলে সেই আশা পরিণত হয় দুরাশায়। সাব্বির রহমানের ৫৩ রান শুধু সান্ত্বনাই দিতে পেরেছে বাংলাদেশকে।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফির দলের বাজে ফিল্ডিং কাজে লাগিয়ে বিশাল সংগ্রহ গড়ে শ্রীলঙ্কা। দুবার ‘জীবন’ পেয়ে ফিফটি করেন থিরিমান্নে। ২৫তম ওভারে তৃতীয় প্রচেষ্টায় থিরিমান্নেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ও একমাত্র সাফল্য এনে দেন রুবেল হোসেন। কিন্তু তার আগেই ১২২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন থিরিমান্নে ও দিলশান।
থিরিমান্নের বিদায়ের পর সাঙ্গাকারা ও দিলশানের ব্যাটে একেবারে পিষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ। দুজনের কাউকেই আউট করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম ও বিশ্বকাপে তৃতীয় শতক করে অপরাজিত ছিলেন দিলশান। ১৪৬ বলে ২২টি চারে সাজানো ১৬১ রানের ইনিংসটি তাঁর ক্যারিয়ারসেরাও।
ব্যক্তিগত ২৩ ও ৬০ রানে দুবার ‘জীবন’ পাওয়া সাঙ্গাকারার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৬ বলে ১০৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। ওয়ানডেতে এটা তাঁর ২২তম শতক। দ্বিতীয় উইকেটে দিলশান-সাঙ্গাকারা গড়েছেন ২১০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
অথচ প্রথম ওভারেই থিরিমান্নেকে সাজঘরে ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বল থিরিমান্নের ব্যাটে লেগে চলে গিয়েছিল প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো এনামুল হকের কাছে। অতি সহজ ক্যাচটা দুই-তিনবারের চেষ্টায়ও তালুবন্দি করতে পারেননি এনামুল। এরপর মুশফিকও ‘জীবন’ দিয়েছেন থিরিমান্নেকে। সাব্বির রহমানের করা ২২তম ওভারে সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেছেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক।
৪১তম ওভারে সাঙ্গাকারার ক্যাচ ফেলে দেন ভালো ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত মুমিনুল। রুবেল হোসেনের বলে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অতি সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি। সে সময় সাঙ্গাকারার রান ৬০। ৪২তম ওভারে দিলশানকে রান আউটের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন এনামুল-মুশফিক। ১০৬ রানে বেঁচে যাওয়া দিলশান দেড়শ ছাড়িয়ে, দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ৩৩২/১ (থিরিমান্নে ৫২, দিলশান ১৬১*, সাঙ্গাকারা ১০৫*; রুবেল ১/৬২)।
বাংলাদেশ : ৪৭ ওভারে ২৪০ (তামিম ০, এনামুল ২৯, সৌম্য ২৫, মুমিনুল ১, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৪৬, মুশফিক ৩৬, সাব্বির ৫৩, মাশরাফি ৭, রুবেল ০*, তাসকিন ০; মালিঙ্গা ৩/৩৫, দিলশান ২/৩৫, লাকমল ২/৪৯, পেরেরা ১/৩৩, ম্যাথিউস ১/৩৬)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ৯২ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : তিলকারত্নে দিলশান।