প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই : নওশাবা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলায় গ্রেপ্তার মডেল ও অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাই গতকাল বুধবার পরিবারের সঙ্গেই ঈদ করেছেন নওশাবা।
আজ বৃহস্পতিবার সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান নওশাবা। তাঁর লেখা একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন স্বামী এহসান রহমান জিয়া। নিজের ফেসবুক থেকে আজ দুপুরে এই চিঠি প্রকাশ করেন জিয়া। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নওশাবা।
‘নওশাবার ঈদ শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ শিরোনাম দিয়ে নওশাবা লিখেছেন, ‘দেশের সবাইকে ঈদুল আজহার বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, আমাকে ঈদের আগের বিকেলে নিম্ন আদালত জামিন প্রদান করেছেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ তার মানবিকতার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি অভিভূত। আমার আইনজীবীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।
আমার একমাত্র কন্যা প্রকৃতির সাথে ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণভাবে অনুভব করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নেই। তিনি বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের একজন পরীক্ষিত, প্রকৃত ও সুযোগ্য অভিভাবক, এই ভূমিকার বাইরেও তিনি যে একজন মমতাময়ী মা, তা আবারো আমি নিজে একজন মা হিসেবে হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে বুঝতে পারলাম। নিকট অতীতেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার মাতৃত্বসুলভ গুণাবলির অনেক দৃষ্টান্ত তিনি রেখেছেন।
পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সাইবার ক্রাইম ইউনিট আর কাশিমপুর কারাগারে দায়িত্বরত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এবং নার্সেরা – যারাই আমাকে অনেক প্রফেশন্যালিজম আর সহমর্মিতার সাথে প্রতিটি স্তরে হেফাজত করেছিলেন, তাদের প্রতিও আমার আকুন্ঠ কৃতজ্ঞতা।
অভিনয় শিল্পী সমিতির প্রেসিডেন্ট এবং সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী আর বাংলাদেশের সকল শিশুসহ আমার শুভাকাংক্ষীদের বলতে চাই—আপনারা যারা বিগত কয়েক সপ্তাহে আমার পরিবারের পাশে থেকেছেন, ক্রমাগত সাহস আর আশ্বাস দিয়েছেন, যার যার ব্যক্তিগত ও পেশাগত অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছেন, তাদের জন্য আমার অনেক ভালবাসা রইল। আপনাদের সবার নিঃস্বার্থ প্রার্থণাতেই আমার মেয়ে প্রকৃতি ঈদের সারাটা দিন তার মাকে কাছে পেয়েছে।
পরিশেষে আমি আবারো একান্ত অনুরোধ করে বলতে চাই, যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার চিরায়ত মাতৃত্বসুলভ মমতায় আমার আবেগতাড়িত ও অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।’
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় দুই ছাত্রের মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলার গুজব ফেসবুকে ছড়ানোর অভিযোগে উত্তরা এলাকা থেকে নওশাবাকে আটক করে র্যাব। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়।
পরে ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম নওশাবার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে ১০ আগস্ট তাঁকে আদালতে হাজির করে ফের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে ডিবি পুলিশ। দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর মাঝে দুবার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর গত মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পান নওশাবা।