শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়
প্রথমে ট্রেন্ট বোল্টের আগুনঝরা বোলিং। তারপর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ঝড়ো ব্যাটিং। শেষে মিচেল স্টার্কের অসাধারণ বোলিং। সব মিলে অসাধারণ এক ম্যাচের জন্ম হলো অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে। ঘুচে গেল এবারের বিশ্বকাপে দুই ‘বড়’ দলের জমজমাট লড়াই না হওয়ার আক্ষেপও। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড জিতেছে মাত্র এক উইকেটে! তবে প্রায় ২৭ ওভার হাতে রেখে টানা চতুর্থ জয়ে কিউইদের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত।
একে তো বিশ্বকাপের দুই আয়োজক, তার ওপরে দুই দলই আছে দারুণ ছন্দে। এই ম্যাচকে ঘিরে তাই আগে থেকেই আলোচনা চলছিল। ক্রিকেট-ভক্তদের প্রত্যাশা মেটাতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কোনো দলই কার্পণ্য করেনি।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কিউই পেসার বোল্টের দুর্দান্ত এক স্পেলে দিশেহারা হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৭ থেকে ২২তম ওভারের মধ্যে আউট হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ছয় ব্যাটসম্যান। এর পাঁচটিই নিয়েছেন বোল্ট। পাঁচ ওভারের দ্বিতীয় স্পেলে এই বাঁ-হাতি পেসারের শিকার পাঁচ উইকেট। এই স্পেলটা বাঁধিয়ে রাখার মতোই, ৫-৩-৩-৫!
অথচ শুরুটা ঝড়ের বেগে করেছিলেন দুই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ইনিংসের তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফিঞ্চকে বোল্ড করে স্বাগতিক দলকে ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন টিম সাউদি। ভেঙে যায় ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ার্নার ও শেন ওয়াটসনের মধ্যে ৫০ রানের জুটি গড়ে ওঠার পর জোড়া আঘাত। ড্যানিয়েল ভেট্টরির করা ত্রয়োদশ ওভারের শেষ বলে ফিরে যান ওয়াটসন। সাউদির পরের ওভারের প্রথম বলে ওয়ার্নারও আউট।
তবে অস্ট্রেলীয়দের ‘আসল’ বিপদের শুরু সপ্তদশ ওভার থেকে। বোল্টের তোপে একের পর এক উইকেট হারিয়ে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পরিণত হয় ১০৬/৯-এ। সেখান থেকে ব্র্যাড হ্যাডিনের লড়াকু ৪৩ রান দেড়শতে পৌঁছে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ২৭ রানে বোল্টের শিকার ৫ উইকেট। ভেট্টরি ও সাউদি নিয়েছেন দুটো করে উইকেট।
জবাবে ম্যাককালামের ২৪ বলে ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংসে সহজ জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। অষ্টম ওভারে অধিনায়ক ফিরে যাওয়ার সময় কিউইদের স্কোর ছিল ৭৮/২। কিন্তু আরেক বাঁ-হাতি পেসার স্টার্ক সহজ জয় পেতে দেননি স্বাগতিকদের। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ২৮ রানে ছয় উইকেট নেওয়া স্টার্ক অবশ্য কেইন উইলিয়ামসনের প্রতিরোধ ভাঙতে পারেননি।
২৩তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে অ্যাডাম মিল্ন ও সাউদিকে দুটো দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে শুধু হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাই জাগিয়ে তোলেননি, অস্ট্রেলীয় শিবিরে জয়ের সৌরভও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন স্টার্ক। তখন জয়ের জন্য ৬ রান প্রয়োজন হলেও নিউজিল্যান্ডের হাতে মাত্র এক উইকেট।
শেষ ব্যাটসম্যান বোল্ট ওভারের শেষ দুটো বল কোনো রকম পার করে দিলে আবার উজ্জীবিত হয়ে ওঠে কিউইরা। নিউজিল্যান্ড দল তখন তাকিয়ে উইলিয়ামসনের দিকে। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানও দলকে বিমুখ করেননি। প্যাট কামিন্সের করা ২৪তম ওভারের প্রথম বল ছক্কা মেরে কিউইদের জয়ের আনন্দে ভাসিয়ে মাঠ থেকে ফেরেন ৪৫ রানে অপরাজিত উইলিয়ামসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৩২.২ ওভারে ১৫১ (ফিঞ্চ ১৪, ওয়ার্নার ৩৪, ওয়াটসন ২৩, ক্লার্ক ১২, স্মিথ ৪, ম্যাক্সওয়েল ১, মার্শ ০, হ্যাডিন ৪৩, জনসন ১, স্টার্ক ০, কামিন্স ৭*; বোল্ট ৫/২৭, ভেট্টরি ২/৪১, সাউদি ২/৬৫, অ্যান্ডারসন ১/৬)
নিউজিল্যান্ড : ২৩.১ ওভারে ১৫২/৯ (গাপটিল ১১, ম্যাককালাম ৫০, উইলিয়ামসন ৪৫*, টেলর ১, এলিয়ট ০, অ্যান্ডারসন ২৬, রনকি ৬, ভেট্টরি ২, মিল্ন ০, সাউদি ০, বোল্ট ০*; স্টার্ক ৬/২৮, কামিন্স ২/৩৮, ম্যাক্সওয়েল ১/৭)
ফল : নিউজিল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ট্রেন্ট বোল্ট।