কবির ক্রিকেট দর্শন
নিউজিল্যান্ডের পথে, বিজয় রথে বাংলাদেশ
চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের পরাজিত হওয়ার ঘটনাটিকে আমি অপ্রত্যাশিত বা অঘটন মনে করছি না। বরং উল্টোটা ঘটলেই অঘটন বলা হতো। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ও গত বিশ্বকাপের (২০১১ সাল) রানার্স-আপ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের তুলনায় অনেক ভালো দল।
এই দলটিতে রয়েছেন সর্বকালের বিশ্বসেরাদের মধ্যে যাদের নাম লিপিবদ্ধ হবে, সে রকম বেশ কজন ক্রিকেটার। যেমন, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকারত্নে দিলশান। এদের সঙ্গে তুলনা করার মতো ব্যাটসম্যান আমাদের একজনও নেই। নেই মালিঙ্গার মতো বোলারও।
তবে ৫০ ওভারের খেলায় যেহেতু বিশ্বের সব কটি সেরা দলকেই কোনো-না-কোনো সময় হারানোর অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে, তাই আমাদের ক্রিকেট দলকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা সর্বদাই আমাদের সামর্থ্যকে ছাড়িয়ে যায়। আমরা জয়ের স্বপ্নে বিভোর হই এবং অনেক সময়ই ব্যর্থতার বেদনা নিয়ে আমাদের মাঠ ছাড়তে হয়।
এবার মেলবোর্নে সেটাই ঘটেছে। বিশ্বের সেরা ক্রিকেট মাঠে খেলতে পারার প্রথম সুযোগটিকে আমরা বিজয়ের মঞ্চে পরিণত করতে পারিনি। এমসিজি কবির প্রার্থনা মঞ্জুর করেনি। তাই বড় ব্যবধানেই শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ।
এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটি, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে না হয়ে যদি ক্যানবেরার মাঠে হতো বা এসসিজিতে (সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড) হতো, তাহলে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এত বড় ব্যবধানে হারতো না। ক্লোজ ম্যাচে হারতো।
ম্যাচের শুরু থেকেই আমার মনে হচ্ছিল যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, মেলবোর্নের মতো বিশাল স্টেডিয়ামের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছেন না। ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা জালাল ইউনুস আমাদের ক্রিকেটারদের বডি ল্যাংগুয়েজ বা দেহ-ভাষার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। শ্রীলঙ্কা এই মাঠে অনেক ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বের এই সবচেয়ে বড় (ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ২৫ হাজার) স্টেডিয়ামটিতে বাংলাদেশ কখনো খেলেনি আগে। মানিয়ে নিতে পারেননি যে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ম্যাচের শুরুতেই। মাশরাফির প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে দেওয়া থিরিমান্নের সহজ ক্যাচটি এনামুল হক বিজয় ধরে রাখতে পারেনি।
পক্ষান্তরে ব্যাটিংয়ের সময় লাসিথ মালিঙ্গার দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে গেলেন আমাদের অন্যতম প্রধান ব্যাটিং ভরসা তামিম। সাব্বির ছাড়া আর কেউ-ই যে শতক দূরে থাক, একটি অর্ধশতও করতে পারলেন না এই ব্যাটিং পিচে, তার পেছনেও রয়েছে এই মনোস্তাত্ত্বিক সমস্যা।
তার পরও বাংলাদেশ যে এমসিজিতে ২৪০ রান করতে পারল, তাকে আমি ভালো বলব। এই মাঠে বড় বড় টিমকেও ১০০ রানের নিচে গুঁড়িয়ে যেতে দেখেছি।
মেলবোর্নকে মন থেকে মুছে ফেলে, আমাদের তাকাতে হবে সামনের দিকে। অমাদের পরবর্তী ম্যাচটি হবে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে। নিউজিল্যান্ডের ছোট মাঠ, নেলসনে।
আমরা আফগনিস্তানকে হারিয়েছি ১০৬ রানে। সেই আফগনিস্তান যদি স্কটল্যান্ডকে হারাতে পারে, তাহলে আমরা স্কটল্যান্ডকে হারাতে পারব না কেন?
পারব। নিশ্চয়ই পারব। যে দল এমসিজিতে ২৪০ রান করতে পারে সেই দল নেলসনের মাঠে ৩০০ রান করতে বা ৩০০ রান চেইজ করতে পারবে। পারবে।
বি. দ্র .
মেলবোর্নে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি আমাদের দলপতি মাশরাফিকে অপমান ও লাঞ্ছিত করেছে বলে শুনেছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয়।