আজম খুব সাধারণ ছিল : আলম খান
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি পপসম্রাট আজম খানের ৬৫তম জন্মবার্ষিকী। আজম খানের ছোটবেলা, গান শুরুর গল্প আরো অনেক বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁর বড় ভাই বিশিষ্ট সুরকার আলম খান।
প্রশ্ন : ছোটবেলায় আজম খান কেমন ছিলেন?
আলম খান : আজম খুব শান্তশিষ্ট ছিল। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর হঠাৎ খুব চঞ্চল হয়ে পড়ে সে।
প্রশ্ন : আপনার কত বছরের ছোট ছিল আজম খান?
আলম খান : আমার পাঁচ বছরের ছোট ছিল আজম।
প্রশ্ন : প্রথমে আজম খান কী ধরনের গান করতেন?
আলম খান : আবদুল লতিফের গাওয়া গণসংগীত গাইত।
প্রশ্ন : আপনি কবে থেকে তাঁকে গান শেখাতে শুরু করেছিলেন?
আলম খান : একদিন আজম বলল, “মেজো ভাই, আমি তো গান কিছু জানি না। না শিখেই গান গাই। আমি আপনার কাছে গান শিখতে চাই। পরে আমি তাঁকে বললাম ঠিক আছে, শেখাব। আমার আরেক ছোট ভাই ছিল তখন সে অভিমান করে বলেছিল ‘আলম ভাই, আমি গান শিখতে চাইলাম কিন্তু আপনি না বলেছিলেন, আর এখন আজমকে গান শেখাবেন।’ তারপর আমি তাঁকে বলেছিলাম, আসলে আজম তো একটা গাধা। তুই তো আর গাধা না।”
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে আজম খানের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন ছিল?
আলম খান : আমরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। আমার সঙ্গে আজম অনেক খোলামেলা কথা বলত। আমরা একই বিছানায় ঘুমাতাম। আমার পোশাক আজম পরত আমি ওর পোশাক পরতাম। আমরা জানতাম না কোনটা কার পোশাক। আমাদের ঘনিষ্ঠতা এত বেশি ছিল। আমার সঙ্গে আজম সবকিছুই শেয়ার করত।
প্রশ্ন : ‘জ্বালা-জ্বালা’ গানটি করার পেছনে কি কোনো ঘটনা আছে?
আলম খান : হঠাৎ করে একদিন খেয়াল করলাম আজমের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। ওর হতাশা দেখেই মূলত ‘জ্বালা-জ্বালা’ গানটি আমি করেছিলাম। তারপর টানা দুই -তিন বছর আজম কোনো কাজ করেনি। হতাশা কী নিয়ে ছিল, আমি এটা ওকে জিজ্ঞেস করিনি।
প্রশ্ন : আজম খান বাসায় কীভাবে গানের রেওয়াজ করতেন?
আলম খান : আমাদের বেডরুম ছিল তিনটা। গান-বাজনা করার জন্য বাইরে আমি একটি ঘর করেছিলাম। হঠাৎ একদিন আজম আমাকে বলল, ‘মেজো ভাই, আমার ঐ ঘরটা লাগবে। আমি সেখানে তিনটি গিটার আর ড্রামস রাখব। বন্ধুদের নিয়ে আমি সেখানে রেওয়াজ করতে চাই।’ তারপর আমি আজমের কলেজ ছুটির পর বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত আমার ঘরে রিহার্সেল করার অনুমতি দেই।
প্রশ্ন : গানের সুরগুলো কি আপনি করে দিতেন?
আলম খান : প্রথমে ওদের গানের সুরগুলো ঠিক ছিল না। আমিই সুরগুলো ঠিক করে দিতাম। এইভাবে ওরা চারটি গান তুলেছিল।
প্রশ্ন : আজম খান প্রথম কোথায় শো করেছিলেন? আপনার কি সেটা মনে আছে?
আলম খান : মধুমিতা হলে তাঁরা প্রথম শো করেছিল। আমি ওই শোতে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। শো চলাকালীন দেখলাম ওরা চারটি গানই পর পর গাইছে। মানুষের কোনো ক্লান্তি নেই। তারা একই গান বার বার শুনছে। রাত ৯টা বাজার পর আজম বলল, ‘আমাদের কাছে আর গান নেই।‘’
প্রশ্ন : আপনি কি বুঝতে পেয়েছিলেন আজম খান একদিন পপসম্রাট হবেন?
আলম খান : শো চলাকালীন আমি লক্ষ করেছিলাম মানুষ প্রচুর নাচানাচি করেছে। আমি তখনই বুঝতে পেয়েছিলাম গানগুলো অনেক জনপ্রিয়তা পাবে। এই কথা আজমকেও আমি বলেছিলাম। একটা ঘটনা বলি, একদিন সন্ধ্যায় দেখি বাড়ির সামনে অনেক রিকশা। সেখানে মানুষজন দাঁড়িয়ে গান শুনছে। আজম তখন বাসায় গান রিহার্সেল করছিল। এরপর রাতে আমি আজমকে বলেছিলাম ‘শুধু গানের সুর শুনেই এত মানুষ! আবার শো করলে তো আরো ভিড় হবে।’ আমি বাসায় গান-বাজনা করলে রাস্তার মানুষের কখনো এত ভিড় হতো না। যখন দেখলাম ওর গান মানুষ মনোযোগ দিয়ে শোনে তখনই বুঝেছিলাম আজম একদিন অনেক জনপ্রিয় হবে।
প্রশ্ন : জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর আজম খানকে কেমন দেখেছিলেন?
আলম খান : আজম খুব সাধারণ ছিল। ওর মধ্যে কোনো চাহিদা ছিল না।