এবার ন্যান্সি ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে জিডি
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি ও তাঁর স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদের বিরুদ্ধে নেত্রকোনা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে আজ শনিবার জিডিটি করেন ন্যান্সির ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সামিউন্নাহার শানুর ভাই সোহাগ আহমেদ। সোহাগ শহরের সাতপাই চক্ষু হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা।
জিডি সূত্রে জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সোহাগের বোন সামিউন্নাহার শানু তাঁর স্বামী শাহরিয়ার আমান সানির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় সানির বড় বোন কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি ও তাঁর স্বামী জায়েদকেও নির্যাতনে উসকানিদাতা বলে আসামি করা হয়।
মামলার পর ওই রাতেই সানিকে শহরের সাতপাই এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু ন্যান্সি ও জায়েদকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এরপর থেকেই শানুর পরিবারকে হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ন্যান্সি ও তাঁর স্বামী।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান জানান, ন্যান্সি ও জায়েদের বিরুদ্ধে মামলা এবং জিডি, উভয় অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
এর আগে মামলার বাদী চার মাসের কন্যাশিশুর মা ও ন্যান্সির ভাই সানির স্ত্রী সামিউন্নাহার শানু বলেন, ‘২০১৫ সালে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে লেখাপড়া করার সময়ে সানির সঙ্গে আমার হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় পারিবারিকভাবেই সানির সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সানি বেকারত্ব দেখিয়ে বোন ন্যান্সি ও বোন জামাই জায়েদের সহায়তায় ও উসকানিতে বিভিন্ন সময়ে আমার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে দাবি করে এনে দিতে বাধ্য করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ আগস্ট রাতে আমার পরিবারের কাছ থেকে নতুন করে আরো পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার কথা বলেন। আমি বাবার বাড়ি থেকে টাকাপয়সা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে, সানি ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে দুধ পান করানো অবস্থায় লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। আমাকে অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন ও মারধর করে একপর্যায়ে শ্বাসরোধ হরে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় আমার আর্ত-চিৎকারে পাশের ঘরে থাকা সানির বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করেন।
বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক আমার পরিবারের লোকজনকে জানালে তারা পুলিশের সহায়তায় আমাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। পুলিশের সহায়তায় পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় সানি আমাকে তালাক দেওয়ারও হুমকি দেয়। আমি পাষণ্ড স্বামী সানির যৌতুকের দাবি ও অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে নিরুপায় হয়ে মামলাটি দায়ের করেছি।’
ভাইকে স্ত্রী নির্যাতনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে ন্যান্সি এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘এই মামলা বানোয়াট। আমার ছোট ভাই সানি গত ২৭ আগস্ট শানুকে ডিভোর্স দিয়েছে। শুনেছি তাঁদের এক বছরের মতো দূরত্ব ছিল। এই দূরত্ব কাটিয়ে ওঠার দায়িত্ব তাদের ছিল। আমি তো নেত্রকোনায় থাকি না। আমি ওই মেয়ের (শানুর) শাশুড়িও না। আমার সংসার আলাদা। এ ছাড়া আমার বড় ভাই ও বাবা দুজনই আলাদা আলাদা জায়গায় থাকেন। নেত্রকোনায় আমাদের বাড়িতে সানিই থাকত। ওর সংসার ছিল ওখানে।’
ন্যান্সি বলেন, ‘মামলায় উল্লেখ আছে, আমি নাকি সানিকে তার স্ত্রীকে নির্যাতনের জন্য উসকানি দিয়েছি? এটা কী করে সম্ভব! আমি ঢাকা ও ময়মনসিংহে থাকি। গত মে মাসে আমার ওই মেয়ের (শানু) সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমি তাদের সংসারে কেন উসকানি দেব? এখানে আমি একদম জড়িত নই। আমাকে ও আমার ভাইকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে।’
ন্যান্সি আরো বলেন, ‘আমার ভাই কিংবা আমি মামলার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। সানির অনার্স পরীক্ষা ছিল ৮ সেপ্টেম্বর। পরীক্ষার আগে আমার সঙ্গে দেখা করতে সে ৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে এসেছিল। আমার সঙ্গে দেখা করে নেত্রকোনায় বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পরই পুলিশ সানিকে গ্রেপ্তার করে।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পী ন্যান্সি বলেন, ‘ওই মেয়ে (শানু) যে অভিযোগগুলো করেছে সেগুলো সিনেমার গল্পের মতো। আমার ভাই যদি তাঁকে নির্যাতন করত তাহলে তখনই সে পদক্ষেপ নিত? এত দেরী করল কেন? আর বিচ্ছেদের পর এটা কেন করতে হলো? এর মানে বিচ্ছেদের পর এসব পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্য আমাদের হয়রানি করা। আমি তো এখানে কোনোভাবেই জড়িত নই। আমার নামটা দিয়েছে যাতে মামলার বিষয়টা দ্রুত ছড়িয়ে যায়। কারণ আমাকে তো সবাই চিনে।’
দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। ২০০৬ সালে ‘হৃদয়ের কথা’ ছবিতে গান গেয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয় তাঁর। এরপর অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়ে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি পান তিনি। তাঁর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ‘পাগল তোর জন্য রে’, ‘ভালোবাসি তোমায়’, ‘দ্বিধা’, ‘আকাশ হতে আমি চাই’, ‘শিশির ভেজা’ ইত্যাদি। ২০১১ সালে ‘প্রজাপতি’ ছবিতে গান গেয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।