পাঠাওয়ের দাবি, খিলক্ষেতে নিহত আরোহী তাদের নন
রাজধানীর খিলক্ষেতে গতকাল সোমবার বাসচাপায় নিহত ব্যক্তি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন না বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পাঠাওয়ের দাবি, সম্ভবত দুর্ঘটনার শিকার মোটরসাইকেলটি অন্য কোনো রাইড শেয়ারিং কোম্পানির অধীনে সক্রিয় ছিল। কিংবা মোটরবাইকের চালক তখন ব্যক্তিগতভাবে (অফলাইনে) ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছিলেন।
আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছেন পাঠাওয়ের ইভেন্ট মার্কেটিং বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজা নাজ অদিতি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পাঠাও লিমিটেড গতকাল সোমবার রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় একটি দুঃখজনক সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়েছে। তথ্যানুয়ায়ী সেখানে একটি বেপরোয়া বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মোটরসাইকেলকে মারাত্মকভাবে চাপা দেয়। খিলক্ষেত থানা কর্তৃক উক্ত বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে ঘাতক ড্রাইভার পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দুর্ঘটনার সংবাদপ্রাপ্তির পর পাঠাও তার নিজস্ব তথ্য-ভাণ্ডার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে উক্ত দুর্ঘটনার সময় মোটরবাইকচালক পাঠাও ব্যবহার করছিলেন না। সম্ভবত দুর্ঘটনার শিকার মোটরসাইকেলটি অন্য কোনো রাইড শেয়ারিং কোম্পানির অধীনে সক্রিয় ছিল। কিংবা মোটরবাইকের চালক তখন ব্যক্তিগতভাবে (অফলাইনে) ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছিল।’
‘এই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি। সেই সাথে এই মর্মান্তিক ঘটনার সংঙ্গে পাঠাওকে জড়িয়ে বিভিন্ন মিথ্যা সংবাদ প্রচারের অপপ্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে খিলক্ষেতের লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে একটি বাস চাপা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলচালক সাব্বির (২৬) ও আরোহী লাফিজুর রহমান (৫০) আহত হন। ওই সময় র্যাব ১-এর একটি গাড়ি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। র্যাব সদস্যরা দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা মোটরসাইকেল আরোহীর গুরুতর অবস্থা দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর র্যাব সদস্যরা মোটরসাইকেল আরোহীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তির নাম লাফিজুর রহমান (৫০)। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরায়। ময়নাতদন্ত শেষে আজ মঙ্গলবার তাঁর লাশ নিয়ে যায় স্বজনরা।
গতকাল বিকেলে হতাহতদের উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন র্যাব ১-এর মেজর মো. রাকিবুজ্জামান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিকসহ অন্য সাংবাদিকরা।
তখন মেজর রাকিবুজ্জামান জানান, লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে একটি বাস চাপায় গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে ছিল মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরোহীর অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক আরোহীকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাকিবুজ্জামান আরো জানান, আহত ব্যক্তি ‘পাঠাও রাইড’ চালক। আর নিহত ব্যক্তি সেই মোটরসাইকেলের আরোহী ছিলেন। নিহত ব্যক্তির কাছে অগ্রণী ব্যাংকের একটি এটিএম কার্ড পাওয়া গেছে। তাতে নাম লেখা আছে লাফিজুর রহমান।
খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মশিউর রহমান খান জানান, মহাখালীগামী একটি যাত্রীবাহী বাস মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটে। ‘স্নিগ্ধা’ নামের যাত্রীবাহী বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। তবে, বাসের চালক পালিয়ে গেছেন।
এই ঘটনা নিয়ে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে এনটিভি অনলাইনে ‘বাসচাপায় পাঠাও আরোহী নিহত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে পাঠাওয়ের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান মাস্টহেড পিআরের টিম লিডার আজম চৌধুরী এনটিভি অনলাইনে ফোন করে দাবি করেন, খিলক্ষেতে নিহত ব্যক্তি পাঠাওয়ের আরোহী নন। ওই মোটরসাইকেল আরোহী অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের আরেক প্রতিষ্ঠান উবার মোটোর যাত্রী। গভীর রাতে তারা এনটিভি অনলাইনে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে একই দাবি করে।